রেকর্ড হারে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে জাপানে, বাড়ছে বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা। বিশদে জেনে নিন।
একদিকে যখন সমগ্র বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে ঠিক তখনই জাপানে ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। জাপান সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, জাপানের জনসংখ্যা ক্রমাগত হারে হ্রাস পাচ্ছে, যার কারণে কিভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছে সে দেশের সরকার। অন্যদিকে সরকারি সূত্রের মাধ্যমে এই খবরটি প্রকাশ্যে আসায় জাপানের জনসংখ্যা কেন কমছে তা জানতে রীতিমতো উৎসাহী হয়ে উঠেছে সমগ্র বিশ্বের জনগণ। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা জাপানের জনসংখ্যার হ্রাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
জাপান সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, জাপান ব্যাপী জাপানি নাগরিকের সংখ্যা ক্রমাগত হারে কমছে এবং বিদেশী নাগরিকদের সংখ্যা উত্তরোত্তর হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলত জাপানের জনসংখ্যা পরিসংখ্যান অনুসারে বলা যায় যে, বর্তমানে জাপানি নাগরিকদের তুলনায় বিদেশি নাগরিকরাই জাপানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাপান সরকারের তরফে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে জানা গিয়েছে যে, বিগত ১৪ বছরে জাপানের জনসংখ্যা ক্রমাগত হারে কমছে, আর এই হ্রাসের হার বছরে প্রায় ৮ লক্ষ। জাপানের আভ্যন্তরীণ বিষয় ও যোগযোগ মন্ত্রণালয়ের তরফে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান অনুসারে আরো জানা গিয়েছে যে, কয়েক বছর পূর্বেও জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ২০ লক্ষ, আর ইতিমধ্যেই সেই জনসংখ্যা ক্রমাগত হারে কমতে থাকায় জাপানের সরকার এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা যথেষ্ট চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ২০০৮ সালে জাপানের জনসংখ্যা যথেষ্ট হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল কিন্তু তার পর থেকেই জন্মহার কমে যাওয়ার কারণে জনসংখ্যা ক্রমাগত হারে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২২ সালে অর্থাৎ বিগত বছরে জাপানের শিশুর জন্মহার রেকর্ড হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে সমগ্র জাপানে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা হ্রাস পেলেও বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা কিন্তু উত্তরোত্তর হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর তাতেই জাপান এখনো পর্যন্ত জনশূন্য হয়ে পড়েনি। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের ১ লা জানুয়ারি পর্যন্ত জাপানের বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০.৭ শতাংশ বেশি। বিগত কয়েক বছর ধরে জাপানে বসবাসকারী বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর তাতেই বিগত দশক থেকে জাপান সরকার জাপানে বসবাসকারী অ-জাপানিদের জনসংখ্যা সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য রাখতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:- পোস্ট অফিস নাকি ব্যাংক কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে অধিক লাভবান হবেন, জেনে নিন।
জাপান সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে, সমগ্র দেশের শিশুদের জন্মহার বৃদ্ধি করার জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এই বিষয়টিকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। সমগ্র জাপানে জাপানি নাগরিকদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের তরফে বিভিন্ন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জাপানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য যে সমস্ত উদ্যোগগুলি গ্রহণ করা হয়েছে তাতে শিশু পরিচর্যা এবং শিশুর পিতা, মাতাকে সহায়তা করার জন্য বছরে ৩.৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন খরচ করার পরিকল্পনা করেছে জাপানের কিশিদা-সরকার। জাপানের প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা করছেন, এইভাবে জাপানি নাগরিকদের সংখ্যা কমতে শুরু করলে আগামী দিনে সমগ্র দেশটাই অদৃশ্য হয়ে যাবে, আর তাতে উচ্চহারে ঋণ থাকা সত্ত্বেও সমগ্র দেশজুড়ে শিশু জন্মের হার বৃদ্ধি করার জন্য জাপান সরকারের তরফে বিভিন্ন প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
তবে শুধুমাত্র জাপানের ক্ষেত্রেই যে শিশু জন্মের হার হ্রাস পাচ্ছে তা নয়, বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকার মত উন্নত দেশগুলিতেও জনসংখ্যা এবং শিশু জন্মের হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে এই সমস্ত দেশগুলিতে জন্মের তুলনায় মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে এইসকল দেশগুলিতে দেশীয় নাগরিকদের অভিবাসনের হারও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার কারণে এই সমস্ত দেশগুলির জনসংখ্যা উত্তরোত্তর হারে হ্রাস পাচ্ছে।