একই সাথে কতগুলো সরকারি এবং বেসরকারি স্কলারশিপে আবেদন করা সম্ভব?

সময়ের সাথে সাথে সমগ্র ভারতজুড়ে প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ঘটছে, আর এর সাথেই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় খরচও ক্রমাগত হারে বাড়ছে। আর তাই সমগ্র ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরা পরিবারের আর্থিক অসহায়তার কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। এই সমস্ত সমস্যাকে দূর করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যগুলির রাজ্য সরকারের তরফে বিভিন্ন প্রকার স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছে। আর তাই সমগ্র দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী নানাবিধ স্কলারশিপগুলি। তবে এক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই সমগ্র দেশের নামজাদা বেসরকারি সংস্থাগুলিও। এই সমস্ত বেসরকারি সংস্থার তরফেও ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য বহু সংখ্যক স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ায় রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী স্কলারশিপ গুলির পাশাপাশি বেসরকারি স্কলারশিপ গুলিও রাজ্যের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রমহলে এই সমস্ত স্কলারশিপগুলিতে আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা থেকে শুরু করে আবেদনের প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় নথি সহ অন্যান্য বিষয়গুলি যথেষ্ট চর্চিত হয়েছে। আর এই সমস্ত কিছুর মাঝে মূল যে প্রশ্নটি উঠে এসেছে তা হল, একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী একইসাথে কতগুলি স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন?

একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রী একইসাথে কতগুলি স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে উক্ত ছাত্র অথবা ছাত্রী কোন ধরনের স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাচ্ছেন তার উপরে। অর্থাৎ একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী সরকারি স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাচ্ছেন নাকি বেসরকারি স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করেই নির্ধারণ করা হয় তিনি একই সাথে কতগুলো স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী স্কলারশিপ হোক অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী স্কলারশিপ যেকোনো ক্ষেত্রেই আবেদনের সময় স্কলারশিপের গাইডলাইনে স্পষ্টতই উল্লেখ করা থাকে যে, একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী একাধিক স্কলারশিপের আওতায় কোনভাবেই অনুদান পাবেন না।

আরও পড়ুন:- আধার কার্ডের তথ্যে ভুল রয়েছে। বাড়িতে বসে নিজের মোবাইলের মাধ্যমে ঠিক করে নিন।

ছাত্র-ছাত্রীরা একইসাথে একাধিক স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানালেও যে স্কলারশিপটির অনুদান প্রথমে sanction করা হয়ে থাকে সেই স্কলারশিপটির অধীনেই উক্ত ছাত্র বা ছাত্রী অনুদান পেয়ে থাকেন, অন্য স্কলারশিপটির আবেদন ক্যান্সেল করে দেওয়া হয়। তবুও বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে শিক্ষার্থীরা একই সাথে একাধিক স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানিয়েছেন এবং অনুদানও পেয়েছেন। তবে একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী একাধিক স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পেলে তাকে যেকোনো একটি স্কলারশিপের অনুদান ফিরিয়ে দিতে হয়। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত তথ্যে জানানো হয়েছিল যে, যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা একের অধিক স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পেয়েছিলেন তাদের রাজ্য সরকারের তরফে একটি স্কলারশিপের অনুদান ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে বেসরকারি স্কলারশিপগুলির আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে একের অধিক স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানানো সম্ভব। এমনকি বেসরকারি স্কলারশিপগুলির ক্ষেত্রে একের অধিক স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পাওয়াও সম্ভব। তবে সমস্ত স্কলারশিপের ক্ষেত্রে এই একই নিয়ম প্রযোজ্য হয় না। বেসরকারি ফাউন্ডেশনগুলির তরফে স্কলারশিপের বিভিন্ন প্রকার গাইডলাইন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। একাধিক স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে আপনি যে যে স্কলারশিপগুলির অধীনে আবেদন জানাতে চাইছেন সেই স্কলারশিপগুলির গাইডলাইন ভালোভাবে পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে যদি একাধিক স্কলারশিপের আওতায় আবেদন এবং অনুদান পাওয়ার বিষয়টি উল্লিখিত থাকে তবেই আপনি একাধিক বেসরকারি স্কলারশিপের সুবিধা নিতে পারবেন। সুতরাং রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী স্কলারশিপগুলির ক্ষেত্রে একইসঙ্গে একাধিক স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পাওয়া সম্ভব না হলেও বেসরকারি স্কলারশিপগুলির ক্ষেত্রে তা সম্ভব।

কিন্তু বেসরকারি স্কলারশিপগুলির ক্ষেত্রে আবার অন্য এক সমস্যা রয়েছে। অধিকাংশ বেসরকারি স্কলারশিপের ক্ষেত্রে কতজন ছাত্র বা ছাত্রী স্কলারশিপ পাবে তার কোটা নির্ধারণ করা থাকে। যার কারণে বহু যোগ্য ছাত্র-ছাত্রী এই সমস্ত স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পান না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি ফাউন্ডেশনগুলির তরফে আয়োজিত নির্দিষ্ট পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে এই স্কলারশিপগুলির আওতায় অনুদান পেতে হয়। সুতরাং এক্ষেত্রেও বেশ কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে। তবে সরকারি স্কলারশিপগুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এইরূপ কোন পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউ নেওয়া হয় না। এদিক থেকে সরকারি স্কলারশিপগুলির আওতায় আবেদন জানানো অধিকতর সুবিধাজনক। সরকারি স্কলারশিপের আওতায় একই সাথে একাধিক স্কলারশিপের সুবিধা না মিললেও বেসরকারি স্কলারশিপের মত অনিশ্চয়তাও নেই।

তবে আপনি কোন স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাবেন সম্পূর্ণভাবে আপনার উপর নির্ভর করছে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, স্কলারশিপে আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে উক্ত স্কলারশিপ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ভালোভাবে জেনে নিন এবং তারপরে আবেদন করুন।

Related Articles

Back to top button