বাড়িতে বাগান তৈরি করতে চান? এই বিশেষ পদ্ধতিগুলি মেনে চলুন।
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ সৌন্দর্যের পিয়াসী, আর তাই সেই আদিম যুগ থেকেই মানুষ প্রকৃতিপ্রেমী। যার কারণে মানুষ নিজের আবাসনটিকেও প্রকৃতির মতোই সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে চায়। আর তাই অধিকাংশ মানুষই বাড়ির পাশের ছোট একফালি জায়গায় কিংবা ছাদে, বারান্দায়, সিঁড়ির কিনারায় অথবা জানালার পাশে ছোট্ট একটি বাগান গড়ে তুলে বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে চান। তবে বাগান করতে চাইলেই তো হলো না, বাগান করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিশেষ পদ্ধতি এবং ট্রিকস জানার প্রয়োজন আছে, যেগুলি না জানলে বাগান তৈরির ক্ষেত্রে নানারকম সমস্যা দেখা দেবে। বাগান তৈরীর এই সমস্ত বিশেষ পদ্ধতি এবং ট্রিকসের মাধ্যমে আপনি আপনার বাড়ির ছোট্ট একফালি জায়গাতেও মনমত বাগান গড়ে তুলতে পারবেন। চলুন তবে বাগান তৈরির এই সমস্ত বিশেষ পদ্ধতি এবং ট্রিকসগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:-
১. কিসের বাগান করতে চান তা নির্বাচন করুন:- বাগান তৈরি করার পূর্বে আপনাকে নির্ধারণ করে নিতে হবে আপনি ফুল বাগান কিংবা ভেষজ গাছের বাগান অথবা সবজি বাগান বা ফলের গাছের বাগান -এর মধ্যে কোন বাগানটি তৈরি করতে চাইছেন। আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে বাগানের জন্য জায়গা নির্বাচন, বীজ কেনা থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রস্তুতিগুলি নিতে হবে। সুতরাং আপনি কোন ধরনের বাগান করতে চাইছেন তা প্রথমেই নির্বাচন করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু অধিকাংশ মানুষই ফুলের বাগান তৈরি করে নিজের বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চান। আপনিও আপনার বাড়িতে নিজের পছন্দ অনুসারে ফুলের চারা বসিয়ে ফুলের বাগান করতে পারেন।
২. বাগানের জন্য একটি জায়গা নির্বাচন করুন:- বাগান তৈরির ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো জায়গা নির্বাচন। আপনি বাগান তৈরির জন্য যে জায়গাটি নির্বাচন করবেন সেখানে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো, বাতাস থাকে তার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। আবার অতিরিক্ত রোদ্রযুক্ত জায়গায় বাগান তৈরি করা সম্ভব নয়, এতে ছোট চারা গাছগুলি শুকিয়ে মরে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ছাদ কিংবা ব্যালকনি অথবা উঠোনের মত জায়গাগুলিকে বেছে নিলে বাগান তৈরিতে যথেষ্ট সুবিধা মেলে। দিনে দুই-তিন ঘণ্টা রোদ আসবে এইরূপ জায়গায় গাছ চাষ করা অত্যন্ত সুবিধাজনক। তবে অন্ততপক্ষে ১ ঘণ্টা আলো পেলেও লঙ্কা, লেবু, পুঁইশাক, পুদিনার বেশ কিছু গাছ খুব ভালোভাবে বাড়তে থাকে। সুতরাং আপনি যে জায়গাটিতে বাগান তৈরি করতে চাইছেন সেই জায়গাটিতে দিনে কতক্ষণ রোদ আসে তার ওপর নির্ভর করে আপনি বাগানে কোন কোন গাছ লাগাবেন তা নির্বাচন করে নিলে অত্যন্ত সহজেই বাগান তৈরি করে নিতে পারবেন।
৩. বাগানের জন্য নির্বাচিত স্থানটিকে পরিষ্কার করুন:- বাগান তৈরির জন্য আপনি যে স্থানটি নির্বাচন করেছেন সেই জায়গাটিকে অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে। আপনি যে জায়গাটিতে বাগান তৈরি করতে চাইছেন সেখানে যদি ঘাস এবং আগাছা থাকে তবে তা গাছের বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকারক। সুতরাং উক্ত জায়গাটিতে যাতে কোনরকম ঘাস, আগাছা কিংবা অপ্রয়োজনীয় গাছ না থাকে সেদিকেও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
আরও পড়ুন:- উচ্চ মাধ্যমিকের পর কি নিয়ে পড়লে সহজে চাকরি মেলে জেনে নিন।
৪. গাছের জন্য মাটি তৈরি:- উঠোনে হোক বা ব্যালকনিতে বা ছাদে যেকোনো জায়গাতেই বাগান তৈরি করতে গেলে সর্বপ্রথম চারাগাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত মাটি তৈরি করতে হবে। বাগান তৈরির জন্য সব থেকে উপযুক্ত মাটি হলো দোআঁশ মাটি। দোআঁশ মাটিতেই ফুল ফল এবং সবজির চারা সব থেকে ভালো হয়। দোআঁশ মাটিতে চারাগাছ লাগানোর পূর্বে গোবর সার, কম্পোস্ট সার কিংবা অন্য যেকোনো কম্পোস্ট সারের মাধ্যমে বাগানের মাটি চাষের উপযুক্ত করে নিতে হবে। মাটি যাতে ঝুরঝুরে থাকে সেদিকেও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। তবে অনেকেই মনে করেন চারাগাছ লাগানোর জন্য মাটি তৈরি করা যথেষ্ট কঠিন কাজ। তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, বাগানের জন্য মাটি তৈরি নিয়ে চিন্তার কোন প্রয়োজন নেই আপনি চাইলেই আপনার নিকটবর্তী নার্সারি থেকে বিভিন্ন গাছের জন্য উপযুক্ত মাটি কিনে আনতে পারবেন।
৫. কি ধরনের গাছ লাগানো উচিত:- আপনি যদি ছাদে অথবা স্বল্প জায়গায় বাগান তৈরি করতে চান তবে ফল ফুল বা সবজি যে ধরনেরই গাছ নির্বাচন করুন না কেন সেটি যেন অবশ্যই কম উচ্চতা যুক্ত হয় তার দিকে বিশেষভাবে নজর দেবেন। ফল গাছ লাগাতে চাইলে কম উচ্চতা যুক্ত, বেশি ঝোপঝাড় সহ গাছগুলিকে নির্বাচন করুন। ছাদে লাগানোর ক্ষেত্রে কম উচ্চতা যুক্ত লতানো গাছ একেবারে উপযুক্ত। যে সমস্ত গাছের শিকড় মাটির অত্যন্ত গভীরে যায় সেই গাছগুলিকে ছাদ বাগান অথবা টবের বাগানের জন্য নির্বাচন করা যাবে না, তবে উঠোনে বাগান তৈরি করতে চাইলে এইরূপ গাছ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। এছাড়াও কম ডালপালাযুক্ত বেশি উচ্চতাসম্পন্ন গাছও নির্বাচন করতে পারেন।
৬. পছন্দমাফিক গাছ নির্বাচন:- আপনার এলাকার জলবায়ু এবং বাগানে কতটা সূর্যের আলো আসে তার ওপর নির্ভর করে গাছ নির্বাচন করতে হবে। আপনার বাগানের জন্য আপনি কসমস, সূর্যমুখী, জিনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, অপরাজিতা, গোলাপ, টগর, বেলী, টমেটো, লঙ্কা, লেবু, বেদানা, সিম, শসা, লেটু, পেঁয়াজ, আদা, পুদিনা, হলুদ, বেগুন, কুমড়ো, চাল কুমড়ো, পুঁইশাক, পালং শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, স্ট্রবেরি -এর মত গাছ নির্বাচন করতে পারেন।
৭. জলসেচের ব্যবস্থা:- ছাদে, উঠোনে অথবা ব্যালকনিতে যেখানেই বাগান করুন না কেন জল ছাড়া গাছগুলিকে কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব নয়, সুতরাং প্রতিটি গাছ যাতে ভালোভাবে জল পায় সেদিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন জল সেচের ব্যবস্থা। আগ্রহী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, আপনার বাগানে কিরকম রোদ আসছে তার ওপর নির্ভর করে চারাগাছে জল দেবেন। অতিরিক্ত জল দেওয়ার ফলেও অনেক সময় গাছ মারা যায়। এর পাশাপাশি আরো জানিয়ে রাখি যে, গাছে ফুল আসলে কিংবা ফল আসার সময় অবশ্যই জৈব সার মিশ্রিত জল দিতে হবে। এছাড়াও জল নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন, নতুবা অতিরিক্ত জলের কারণে গাছ মারা যেতে পারে।
৮. গাছের যত্ন নিন:- ফুল, ফল অথবা সবজি যে ধরনের গাছই চাষ করুন না কেন আপনাকে অবশ্যই গাছের যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে গাছে জল দিতে হবে, সময় মতো জৈব সার কিংবা গোবর সার দিতে হবে। এছাড়াও আগাছা, অপ্রয়োজনীয় গাছ এবং ঘাস নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করতে হবে, গাছ অতিরিক্ত লম্বা হয়ে গেলে সেগুলিকে ভালোভাবে ছাঁটাই করতে হবে। মৃতপ্রায়, মরা, রোগাক্রান্ত গাছগুলিকে বাগান থেকে সরিয়ে দেওয়াই ভালো, সুতরাং বাগানের গাছগুলির ওপর প্রতিনিয়ত নজর রাখতে হবে। তবে এখানেই শেষ নয় এর পাশাপাশি আরো জানিয়ে রাখি যে নানা কারণে গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় বাসা বাঁধে যা গাছের ফলনকে কমিয়ে দেয়, এমনকি গাছকে মেরেও ফেলতে পারে। এই সমস্ত পোকামাকড় থেকে গাছকে সুরক্ষিত রাখুন।