চাকরি নাকি ব্যবসা কোনটি আপনার জন্য সেরা। বুঝবেন কিভাবে জেনে নিন।
জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য অর্থ উপার্জন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে অর্থ উপার্জনের জন্য চাকরি নাকি ব্যবসা কোন রাস্তাটা বেছে নেওয়া হবে তা নির্ধারণ করতে পারাও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর এই কাজটি সঠিকভাবে না করতে পারলেই জীবনে বারবার নানারকম সমস্যায় পড়তে হয়। আর তাতেই উচ্চশিক্ষা লাভের পর যুবক-যুবতীদের মধ্যে বারংবার একটিই প্রশ্ন উঠতে থাকে। এই প্রশ্নটি হল ভবিষ্যতে চাকরি করলে ভালো হবে নাকি ব্যবসা। আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই যত সমস্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চাকরি এবং ব্যবসার মধ্যে ঠিকঠাকভাবে নির্বাচন না করতে পারার কারণে সমগ্র দেশের যুবসমাজ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। চাকরি নাকি ব্যবসা কোনটি আপনার জন্য বেস্ট হবে তা নিয়ে আপনার মনেও যদি নানা ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে, তবে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য একেবারে পারফেক্ট হতে চলেছে।
চাকরি নাকি ব্যবসা কোনটি আপনার জন্য একেবারে সঠিক তা কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:-
(ক) চাকরি নাকি ব্যবসা করবেন তা নির্বাচন করার পূর্বে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি করতে ভালোবাসেন? কারণ আপনি যে সমস্ত কাজগুলি করতে ভালোবাসেন তার ওপর নির্ভর করবে আপনি আগামী দিনে নিজের কর্মক্ষেত্রে কতটা উন্নতি করতে পারবেন। আপনি যদি নিজে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পছন্দ করেন এবং ভবিষ্যতেও তা করতে চান তবে আপনার জন্য ব্যবসা একেবারে পারফেক্ট। অন্যদিকে আপনি যদি মনে করেন আপনি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় কাজ করে মাসের শেষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন পেতে চান তবে আপনার জন্য চাকরি একেবারে পারফেক্ট।
(খ) আপনি যদি আপনার কাজে দক্ষ হয়ে থাকেন তবে একটি চাকরি হারানোর পরেও অন্য চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনরকম সমস্যা হবার কথা নয়। এমনকি ভালো বেতন এবং ভালো প্যাকেজ হলে আপনি নিজে থেকেই চাকরি ছেড়ে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি যে কোম্পানিতে চাকরি করছেন সেই কোম্পানি ডুবে গেলেও আপনাকে বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। কিন্তু আপনার দাঁড় করানো ব্যবসা যদি ডুবে যায় তবে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে এক বিপুল সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। অন্যদিকে আপনার সেই ব্যবসাটিকে নতুন করে গড়ে তুলতেও আপনাকে যথেষ্ট খাটাখাটনি করতে হবে। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ভারতের ৯০% ব্যবসাই শুরু হওয়ার ৩ বছরের মধ্যেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তবে আপনি যদি সঠিকভাবে আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন তাহলে চাকরির তুলনায় অনেক বেশি টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন। সুতরাং আপনি যদি রিক্স নিতে পারেন তবে নিজের ব্যবসাকে দাঁড় করানোর মাধ্যমে প্রচুর টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।
(গ) চাকরি থেকে প্রত্যেক মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হলেও প্রমোশন পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে ব্যবসার মাধ্যমে আপনি যথেষ্ট দ্রুততার সাথে অর্থ উপার্জন করে নিতে পারবেন। কিন্তু চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে পড়াশোনার খরচ ছাড়া বিশেষ কোন খরচ থাকে না, অন্যদিকে ব্যবসা শুরু করতে গেলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট আমানতের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। যদিও অনেকেই লোন নেওয়ার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করতে চান, কিন্তু লোন নেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাংকের নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সুতরাং আপনার কাছে যদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যথেষ্ট পরিমাণ টাকা থাকে তবেই আপনি ব্যবসা ক্ষেত্রে এগোনোর কথা ভাববেন, নতুবা আপনি যেকোনো কাজের মাধ্যমে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করে নিয়ে ব্যবসা ক্ষেত্রে এগোতে পারেন অথবা নিজের ইচ্ছা অনুসারে চাকরি বেছে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন:- এগিয়ে এলো মাধ্যমিক পরীক্ষা, আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনক্ষণ জেনে নিন।
(ঘ) চাকরি এবং ব্যবসা উভয়ক্ষেত্রেই পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে চাকরিক্ষেত্রে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খাটাখাটনি করতে হবে, কিন্তু দিনশেষে আপনি নিজের বাড়িতে ফিরে নিশ্চিন্তে আরাম করতে পারবেন। এছাড়াও সপ্তাহের শেষে ছুটি পাবেন। কিন্তু একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে হলে আপনাকে সারাদিনের বেশিরভাগ সময়টাই ব্যবসার কাজে নিয়োগ করতে হবে, এমনকি নির্দিষ্ট কোন ছুটির দিনও থাকবে না। সুতরাং আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করে ব্যবসা দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে তবেই ব্যবসা ক্ষেত্রে এগোবেন নতুবা আপনার জন্য চাকরিটাই বেস্ট।
(ঙ) আপনি যদি চাকরি ক্ষেত্রে যোগদান করতে চান তবে আপনাকে আপনার কাজটুকু সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে এবং নতুন নতুন স্কিল শেখার মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিত্যনতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হবে ও কাজের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি ব্যবসা করতে চান তবে ব্যবসার সমস্ত দায়িত্ব আপনার কাঁধে থাকবে। ব্যবসা যত বাড়বে আপনার অধীনে কর্মরত কর্মচারীর সংখ্যাও তত বাড়বে। এই সমস্ত কর্মচারীদের দিয়ে সঠিকভাবে কাজ করানো থেকে শুরু করে ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট, ডাটা ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট সহ সমস্ত দিকগুলিই আপনাকে দেখতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি দায়িত্ব সহকারে সমস্ত দিক সামলানোর যোগ্যতা রাখেন তবেই আপনি ব্যবসা বেছে নিন।
(চ) চাকরি ক্ষেত্রে প্রমোশন পাওয়ার জন্য আপনাকে শুধুমাত্র নিজস্ব কাজের উপর অভাবনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং নির্ভুলভাবে সমস্ত কাজ করতে হবে, তাহলেই আপনি আপনার কাঙ্খিত পদে প্রোমোশন এবং যথেষ্ট ভালো অংকের টাকা বেতন হিসেবে পেয়ে যাবেন। অন্যদিকে একটি ব্যবসা সামলানোর ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন স্কিল শিখতে হবে, তবে আপনি আপনার ব্যবসাকে উন্নতি শিখরে নিয়ে যেতে পারবেন। সুতরাং আপনি যদি সমস্ত জিনিসগুলি শেখার মধ্যে দিয়ে নিজের ব্যবসার অগ্রগতি করার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকেন তবে আপনি ব্যবসা বেছে নিন।
উপরোক্ত বিষয়গুলি নজরে রেখে বলা যায় যে, আপনি যদি সীমিত বেতন, সীমিত দায়িত্ব এবং সীমিত রিক্স নিয়ে একটি সুরক্ষিত জীবনযাপন করতে চান তবে চাকরি আপনার জন্য একেবারে পারফেক্ট। অন্যদিকে আপনি যদি প্রচুর রিক্স নিতে ভালোবাসেন, যথেষ্ট স্বাধীনতার সাথে নিজের কাজ করতে ভালোবেসে থাকেন এবং নিজের কাজ থেকে প্রচুর টাকা উপার্জন করতে চান তবে ব্যবসা আপনার জন্য একেবারে পারফেক্ট। সুতরাং আপনি যদি নিজের সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্থ জীবনে সন্তুষ্ট থাকেন তবে আপনি চাকরিকেই বেছে নিন। আর আপনি যদি প্রচুর রিক্স নিয়ে নিজের জীবনযাপন এবং প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে চান তবে নিজের ব্যবসা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করুন।