পড়াশোনায় মনোযোগ বসছে না? জেনে নিন পড়াশোনায় মনোযোগী হবার ৭ টি বিশেষ উপায়।

কিছুদিন পূর্বেই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। তবে শুধু মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলই নয় এর সাথে আগামী বছরের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিনও প্রকাশ করা হয়েছে পর্ষদের তরফে। আর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের রুটিন প্রকাশের পর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় মন না বসা নিয়ে বারংবার অভিযোগ জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। আবার অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা পড়তে চাইলেও একটানা বেশিক্ষণ পড়তে পারছেন না, যার কারণে তারা বারংবার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই সমস্ত সমস্যার কারণে কিভাবে সহজে পড়াশোনায় মন বসানো যাবে তা নিয়ে জানতে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকেরা। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি ছোট ছোট অভ্যাসে পরিবর্তন আনলে অত্যন্ত সহজেই পড়াশোনায় মন বসানো সম্ভব। আর তাই কিভাবে সহজে পড়াশোনায় মন বসানো সম্ভব তা নিয়ে আজকের এই পোস্টে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবার চেষ্টা করছি।

কিভাবে আপনারা সহজেই পড়াশোনায় মন বসাতে পারবেন:-

১. পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বাধা দেয় এমন বস্তুকে দূরে রাখুন:- বর্তমান যুবসমাজ বইয়ের তুলনায় টিভি, মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ইউটিউব -এর মতো নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে মগ্ন থাকতে বেশি পছন্দ করে। আর এই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের সঙ্গে জুড়েছে পাবজি, ফ্রি ফায়ার থেকে শুরু করে নানা ধরনের মোবাইল এবং কম্পিউটার গেমের নাম। যার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং গেম ছেড়ে আপনিও যদি পড়াশোনায় মনোযোগী হতে চান তবে পড়তে বসার সময় মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি থেকে দূরে থাকুন। এছাড়াও পড়তে বসার সময় বিভিন্ন ধরনের ইনডোর গেমস, গল্পের বই থেকে শুরু করে খেলার সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন। এর পাশাপাশি প্রত্যেক দিন রাতে কিছুক্ষণ হলেও বই পড়ার চেষ্টা করুন। এর ফলে একদিকে যেমন রাতের ঘুম ভালো হবে অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই অনেকক্ষণ ধরে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।

২. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:- যেকোনো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা থেকে শুরু করে জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরী। সুতরাং প্রত্যেক দিন পড়া শুরু করার পূর্বে আপনি কোন কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চাইছেন, প্রতিটি বিষয়ের কতগুলি চ্যাপ্টার পড়তে চাইছেন এই সমস্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিন। আপনি কত সময়ের মধ্যে এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারছেন তাও নির্ধারণ করে নিন এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। এছাড়াও আপনি ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। অর্থাৎ যেকোনো একটি বিষয়ের জন্য ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় নির্ধারণ করুন এবং ওই সময় ওই বিষয়টি নিয়ে পড়ুন। এরপর খানিকটা ব্রেক নিয়ে পুনরায় আরেকটি বিষয় নিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট মিনিট পর্যন্ত পড়ুন। এভাবেই আপনি ধীরে ধীরে পড়াশোনার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে পারবেন। এর ফলে আপনি অত্যন্ত সহজেই নিজের লক্ষ্য পূরণ করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন এবং একটানা অনেকক্ষণ পড়তে পারবেন।

৩. পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন:- সমস্ত মানুষই পড়ার ক্ষেত্রে নিজের পছন্দ সই সময়টাকে বেছে নিয়ে থাকেন। অনেকেই ভোরবেলা উঠে পড়তে পছন্দ করেন, আবার অনেকেই গভীর রাত্রে পড়াশোনায় মন দিতে পছন্দ করে। সুতরাং আপনি যে সময়ে পড়তে চাইছেন সেই সময়টি বেছে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে নিন এবং প্রত্যেকদিন ওই নির্দিষ্ট রুটিন অনুসারে পড়াশোনা শুরু করুন। তবে প্রথমবারেই যে ১০-১২ ঘন্টা পড়তে পারবেন তা নয়, প্রথম দিন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পড়ুন, তারপর ধীরে ধীরে পড়ার সময় বাড়াতে শুরু করুন। আর পড়ার সময় বাড়ার সাথে সাথে রুটিনটিও পরিবর্তন করতে থাকুন এইভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনি সারাদিনে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত পড়তে পারবেন।

আরও পড়ুন:- নতুন ভোটার কার্ডের জন্য আবেদন করতে চান? রইলো সহজ পদ্ধতি।

gamezop ad

৪. চেয়ারে কিংবা মেঝেতে বসে পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন:– বিছানায় বসে পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। বিছানার বদলে আপনি চেয়ার কিংবা মেঝেতে বসে পড়তে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে বিছানায় বসে পড়াশোনা করলে অত্যন্ত সহজেই ছাত্র-ছাত্রীদের ঘুম চলে আসে যার ফলে তারা বেশিক্ষণ পড়তে পারেন না। কিন্তু চেয়ারে বসলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে আরও জানিয়ে রাখি যে, পড়াশোনার সময় খাতা ক্যালকুলেটর জ্যামিতি বক্সের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি আপনার হাতের কাছে রাখুন। এর ফলে পড়তে পড়তে বারংবার উঠতে হবে না এবং আপনি মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে পারবেন।

৫. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন:- পড়াশোনা করার জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য ব্যায়ামের তুলনা নেই। সুতরাং প্রত্যেকদিন সকালে কিছুটা সময় ব্যায়াম করুন। অনেকেই সকালে উঠতে পারেন না তাদের বিকেলে খানিকটা হলেও ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এর ফলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ায় মনোযোগী হয়ে উঠবেন।

৬. প্রত্যেকদিন অন্ততপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমান:- মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করার জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরী। এমনকি শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ঘুম আবশ্যক। সুতরাং মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার জন্য প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। সম্ভব হলে প্রত্যেক দিনে পড়াশোনা শেষ করে রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে চেষ্টা করুন। এর ফলে আপনি প্রত্যেকদিন একটি নির্দিষ্ট সময় উঠতে পারবেন এবং একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসারে পড়াশোনা করতে পারবেন। অন্যদিকে রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে সারাদিন আপনার মধ্যে একটি বিরক্তিভাব কাজ করবে এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে। যার ফলে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

৭. পড়াশোনা নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়:– অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাত্র-ছাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে সিলেবাস শেষ করা থেকে শুরু করে কিভাবে নানা ধরনের বিষয়ে আয়ত্তে আনবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে থাকেন। আর এই সমস্ত দুশ্চিন্তার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা সঠিকভাবে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে পারেন না, যার প্রভাব পড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের রেজাল্ট। সুতরাং আপনিও যদি মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে চান তবে সিলেবাস পরীক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন প্রত্যেকদিন মনোযোগ সহকারে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করলে আপনি অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ে সিলেবাস শেষ করতে পারবেন এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারবেন।

Related Articles

Back to top button