উৎক্ষেপণের পর চন্দ্রযান ৩ কতদূর পৌঁছেছে, জেনে নিন।
চন্দ্রযান ২ বিফল হওয়ার পর ঠিকই ইসরোর বিজ্ঞানীরা জোরকদমে চন্দ্রযান ৩ এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন। আর কিছুদিন পূর্বেই মাত্র ৬০০ কোটি টাকার বাজেটে চন্দ্রযান ৩ তৈরি করে এবং সফলভাবে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের নজর কেড়েছে ইসরো এবং চন্দ্রযান ৩। হিসাব অনুসারে চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণের পর থেকে ১০ দিন সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আর তাতেই বর্তমানে চন্দ্রযান ৩ নিয়ে চর্চার অন্ত নেই, এই ১০ দিনে চন্দ্রযান ৩ কতটা রাস্তা অতিক্রম করেছে এবং কবে চাঁদে পৌঁছাবে তা নিয়ে সমগ্র ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে থেকে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন উঠে এসেছে। আর এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন খোদ ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
ইসরোর বিজ্ঞানীদের তরফে জানানো হয়েছে যে, এখনো পর্যন্ত চন্দ্রজান ৩ -এর যাত্রায় কোনরকম বিঘ্ন আসেনি। বর্তমানে চন্দ্রযান ৩ ৭১৩৫১ কিমি x ২৩৩ কিমি অবস্থান করছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব ছেড়ে বেরোতে পারেনি। পৃথিবীর অভিকর্ষ বল কাটিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে এখনো পর্যন্ত বেশ কিছুটা সময় প্রয়োজন। ইসরোর তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে আরো জানা গিয়েছে যে, চন্দ্রযান ৩ ধীরে ধীরে গতিপথ পরিবর্তন করার কারণে মোট পাঁচটি কক্ষপথ পরিবর্তনের জন্য প্ল্যান করা হয়েছিল ইসরোর বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে আর ইতিমধ্যেই এর চারটি ধাপ সফলভাবে উত্তীর্ণ করা সম্ভব হয়েছে। এখন শুধু পঞ্চম ধাপটি বেরোনোর অপেক্ষা। পঞ্চম ধাপটি পেরোলেই চন্দ্রযান ৩ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল কাটিয়ে বেরোবে এবং চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাবে।
বিজ্ঞানীদের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে আরো জানা গিয়েছে যে, ২৫ শে জুলাই চন্দ্রযান ৩ শেষবারের জন্য তার কক্ষপথ পরিবর্তন করবে অর্থাৎ ২৫ শে জুলাই থেকে চন্দ্রযান ৩ -এর চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিপূর্বে, ১৫ জুলাই, ১৬ই জুলাই, ১৮ জুলাই এবং ২০ শে জুলাই চন্দ্রযান ৩ চারবার কক্ষপথ পরিবর্তন করেছে। আর এই চরবারই ইসরোর বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা অনুসারে সফলভাবে কক্ষপথ পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছে চন্দ্রযান ৩। আর তাতেই চন্দ্রযান ৩ -এর পঞ্চমবার কক্ষপথ পরিবর্তনের দিকে নজর রয়েছে ভারতের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী মহলে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের। মূলত কক্ষপথ ধরে ধাপে ধাপে পৃথিবীর সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি করছে চন্দ্রযান ৩। এই পঞ্চম ধাপটি সফলভাবে অতিক্রান্ত হলেই পৃথিবী থেকে চাঁদে পরিবহণকারী কক্ষপথে প্রবেশ করবে চন্দ্রযান ৩, আর এর পরবর্তীতে মহাকাশযান দিকে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বল টেনে নেবে।
বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা অনুসারে, চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বলের আওতায় প্রবেশ করবার পূর্বে পৃথিবীর কক্ষপথে বেশ খানিকটা সময় কাটাচ্ছে চন্দ্রযান ৩। আর এভাবে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলকে কাজে লাগিয়ে চন্দ্রযান ৩ নিজের গতিও বেশ খানিকটা বৃদ্ধি করে নিচ্ছে। বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা অনুসারে সমস্ত ঠিক থাকলে এবং মহাকাশে কোনোরকম বাধা-বিপত্তি না ঘটলে আগামী ২৩ শে আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট -এর মধ্যে নিজের গন্তব্যে অর্থাৎ চাঁদে পৌঁছে যাবে চন্দ্রযান ৩। এরপর যাদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ থেকে ল্যান্ডার বিক্রম সফলভাবে চাঁদের মাটিতে নামতে পারে এবং এরপর রোভার প্রজ্ঞানকে সঠিকভাবে অবতরণ করাতে পারে তাহলে উৎক্ষেপণের লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে। তবে শুধু যে বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য পূরণ হবে তা নয়, চন্দ্রযান ৩ চাঁদের মাটিতে সফলভাবে ল্যান্ড করতে পারলে ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এক নতুন পালক যুক্ত হবে।
বিজ্ঞানীদের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, উৎক্ষেপণের প্রায় ৪০ দিন পরে চাঁদের মাটিতে সৌরচালিত ল্যান্ডার বিক্রম ল্যান্ড করতে পারে। এরপর সেখান থেকে সৌরচালিত রোভার প্রজ্ঞান বেরিয়ে চাঁদের মাটিতে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে এবং চাঁদের মাটির চরিত্র সহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থের উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। এর পাশাপাশি আরও জানা গিয়েছে যে, যে অঞ্চল দিয়ে প্রজ্ঞান চলাচল করবে সেই অঞ্চলে অশোক স্তম্ভ এবং ইসরোর প্রতীক আঁকা হবে, যা সমগ্র ভারতের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের কাছেও গর্বের বিষয়। ইসরোর এই অভিযান সফল হলে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করাবে ভারত। ইতিপূর্বে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণ করানোর মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং চীন সমগ্র বিশ্বের নজর কেড়েছিল আর তাতেই এবারে সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্ববাসীর নজরে রয়েছে ভারতের তরফে উৎক্ষেপিত চন্দ্রযান ৩।