ডাক্তার হওয়ার জন্য কি নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়, জেনে নিন।
ছোটবেলায় আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময়ে জীবনের লক্ষ্য অথবা জীবনে কি হতে চাই তা নিয়ে রচনা লিখেছি। জীবনে কি হতে চাইয়ের পাতায় ছোটবেলাতে শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, কার্টুনিস্ট, অভিনেতা থেকে শুরু করে ডাক্তার সমস্ত ধরনের পেশার নামে উল্লেখ থাকত। জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলেই নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে যথেষ্ট ভালোভাবে পড়াশোনা করা প্রয়োজন, আর তা যদি ডাক্তার হওয়ার প্রসঙ্গ হয় তবে তো কোন কথাই নেই। অন্য যেকোনো পেশার মতই ডাক্তার হতে গেলেও ছাত্র-ছাত্রীদের কতগুলি বিশেষ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয় এবং নির্দিষ্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে ডাক্তার হওয়ার জন্য নিজস্ব সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়।
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ডাক্তার হওয়ার ক্ষেত্রে কি নিয়ে পড়াশোনা করা প্রয়োজন:-
উচ্চ মাধ্যমিকের পর যেকোনো প্রফেশনাল কোর্সের অধীনে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া গেলেও তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় মাধ্যমিকের পর থেকেই। ডাক্তার হওয়ার ক্ষেত্রে মাধ্যমিকের পর আপনাকে সাইন্স বিভাগ বেছে নিতে হবে এবং সাইন্স বিভাগের অধীনে পড়াশোনা করার মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। মাধ্যমিকের পর সাইন্স নিয়ে একাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে বাংলা এবং ইংরেজির সাথে সাথে সাইন্সের যেকোনো তিনটি বিষয় নির্বাচন করে নিতে হয়। এক্ষেত্রে বায়োলজির পাশাপাশি অংক, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি মতো বিষয়গুলির মধ্যে থেকে যেকোনো ২ টি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হয়। ডাক্তার হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা এবং ইংরেজির পাশাপাশি আপনি যে বিষয়গুলি বেছে নেবেন তার মধ্যে বায়োসাইন্স বা বায়োলজি থাকা আবশ্যক। এছাড়াও বায়োসাইন্স কিংবা বায়োলজির পরিবর্তে বায়ো টেকনোলজি বিষয়টি থাকলেও আপনি পরবর্তীতে ডাক্তারির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
তবে মাধ্যমিকের পর সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করলেই যে ডাক্তারি নিয়ে পড়ার সুযোগ মিলবে তা নয়, ডাক্তারি নিয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য আপনাকে উচ্চ মাধ্যমিকে নূন্যতম ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের উত্তীর্ণ হতে হবে এবং সর্বভারতীয় NEET পরীক্ষার মেধা তালিকায় জায়গা করে নিতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, তপশিলী জাতি এবং উপজাতিভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নূন্যতম ৪০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হলেই NEET পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। NEET পরীক্ষার মেধা তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার পর মেডিক্যাল কাউন্সিলিং প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে অনলাইনে মাধ্যমেই এই কাউন্সেলিং -এর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
আরও পড়ুন:- নবান্ন স্কলারশিপের আওতায় আবেদন করলেই মিলবে ১০,০০০ টাকার অনুদান।
আর এই মেডিক্যাল কাউন্সেলিং -এর মাধ্যমেই মেডিকেল বোর্ডের কর্মকর্তারা ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাতালিকার স্থান অনুসারে তারা কোন কলেজে পড়াশোনা সুযোগ পেতে চলেছেন তা নির্ধারণ করে থাকেন। কাউন্সেলিং -এর মাধ্যমে মেডিকেল কলেজ নির্ধারণ করা হলে আপনি ডাক্তারি নিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন। মেডিকেলে সুযোগ পাওয়ার পর প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে এমবিবিএস কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করতে হবে এবং সবশেষে এমবিবিএস কোর্সে উত্তীর্ণ হয়ে ১ বছরের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করতে হবে। ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন হলেই আপনি ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পেয়ে যাবেন এবং রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলেই আপনাকে ডাক্তাররূপে মান্যতা দেওয়া হবে। ১ বছরের ইন্টার্নশিপ চলাকালীন আপনি হাসপাতালের তরফে নির্ধারিত উপবৃত্তি পাবেন, যদিও এক্ষেত্রে আপনার স্টাইপেন্ড কিংবা উপবৃত্তি থেকে কোনো রকমের ট্যাক্স কাটা হবে না।
সাড়ে চার বছরের কোর্সে আপনাকে যে বিষয়গুলি নিয়ে পড়তে হবে তা হল:-
1. ফার্স্ট সেমেস্টারের অধীনে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যানাটমি, ফিজিওলজ এবং বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়।
2. সেকেন্ড সেমিস্টার আওতায় পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের ফার্মাকোলজি, ফরেন্সিক মেডিসিন, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়।
3. থার্ড সেমিস্টারের অধীনে পড়াশোনা করছেন এরূপ ছাত্র-ছাত্রীদের অপথ্যালমোলজি, ওটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি, কমিউনিটি মেডিসিন সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হয়।
4. ফাইনাল সেমিস্টারের অধীনে পড়াশোনা করছেন এরূপ ছাত্র-ছাত্রীদের জেনারেল মেডিসিন, জেনারেল সার্জারি, অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গায়নেকোলজি, পেডিয়াট্রিক্স (নিওন্যাটোলজি-সহ) সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়।