ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবেন, জেনে নিই।
বাসস্থানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বাড়ি তৈরি থেকে শুরু করে কম্পিউটার, মোবাইল, গাড়ি, সেতু, রাস্তা এমনকি মহাকাশ তৈরির ক্ষেত্রেও ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য, এমনকি যেকোনো যন্ত্র বিকল হয়ে গেলে তাকে পুনরায় কার্যকরী করে তোলার ক্ষেত্রেও ইঞ্জিনিয়ারদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সমগ্র ভারতজুড়ে এমন বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন যারা ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তবে স্বপ্ন সত্যি করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়, কোন কোর্সে ভর্তি হতে হয় তা সম্পর্কে সমস্ত সঠিক তথ্য জানা আবশ্যক। আর তাই আজ আমরা ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে কোন বিষয় সংক্রান্ত পড়াশোনা করতে হবে তা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত?
মূলত দ্বাদশ শ্রেণীর পর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং -এর পড়াশোনা শুরু হলেও মাধ্যমিক অথবা দশম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষার পর থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর সাইন্স অথবা বিজ্ঞান বিভাগের অধীনে অংক, ফিজিকস্ এবং কেমিস্ট্রি এই তিনটি বিষয়কে নির্বাচন করতে হবে। এছাড়াও অংকের পরিবর্তে কম্পিউটার সাইন্স কিংবা কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন বিষয়টিও নির্বাচন করা যেতে পারে। অর্থাৎ অংকের পরিবর্তে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন কিংবা কম্পিউটার সাইন্স নির্বাচন করলেও আপনি ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে সাইন্স বিভাগে পড়াশোনা করলেই যে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ মিলবে তা নয়।
সমগ্র দেশের বিভিন্ন নামিদামি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি এবং ম্যাথ কিংবা কম্পিউটার সায়েন্স সহকারে ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের জয়েন্ট এন্ট্রাস মেইনস্ পরীক্ষা, জয়েন্ট এন্ট্রাস অ্যাডভান্সড পরীক্ষা, ভিআইটিইইই এবং বিটস্যাট -এর মত পরীক্ষাগুলিতে উত্তীর্ণ হতে হয়, তবেই ছাত্র-ছাত্রীরা ইঞ্জিনিয়ারিং -এর আওতায় পড়াশোনা করবার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা BTECH কিংবা BE কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করবার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এই দুটি ডিগ্রী কোর্সের অধীনে ছাত্র-ছাত্রীদের চার বছরের জন্য পড়াশোনা সম্পন্ন করতে হয়। BTECH কিংবা BE সম্পন্ন করার পর উক্ত ছাত্র বা ছাত্রী ইঞ্জিনিয়ার রূপে বিভিন্ন সরকারি কিংবা বেসরকারি ক্ষেত্রে যোগদানের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- মেধাশ্রী স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানালেই মিলবে বার্ষিক ৮০০ টাকার অনুদান।
ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, ইঞ্জিনিয়ারিং -এর বিভিন্ন ধরনের শাখা রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং -এর এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীরা এই সমস্ত শাখার মধ্যে থেকে যেকোনো একটি শাখা নির্বাচন করে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমেশন ও রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অল্টারনেটিভ এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো শাখাগুলি বর্তমানে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অন্যদিকে কম্পিউটার সায়েন্স, মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন, কেমিক্যাল ও ডিজাইন ইঞ্জিনিয়াররা অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় যথেষ্ট বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। সুতরাং এই সমস্ত শাখার মধ্যে থেকে আপনি আপনার পছন্দসই শাখা নির্বাচন করতে পারেন অথবা এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং -এর যেসকল শাখা রয়েছে তার মধ্যে থেকে আপনার পছন্দ অনুসারে শাখা নির্বাচন করে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করতে পারে।
মাধ্যমিকের পরে মিলবে ইঞ্জিনিয়ারিং এর সুযোগ:-
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীরা মনে করেন শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করলে তবে ইঞ্জিনিয়ারিং -এর আওতায় পড়াশোনা করার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আপনি চাইলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার মাধ্যমেও ভবিষ্যতে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। যদিও এক্ষেত্রে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিভিন্ন পলিটেকনিক কলেজের তরফে আয়োজিত এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং -এর অধীনে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে মূল যে প্রশ্নটি থাকে তা হল আর্টস কিংবা কমার্সের ছাত্র-ছাত্রীরা কি কোনোভাবেই ইঞ্জিনিয়ারিং -এর অধীনে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন না? আর এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় যে, দ্বাদশ শ্রেণীতে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা কমার্স এবং আর্টস বিভাগে পড়াশোনা করেন তারা উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং -এর আওতায় পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে মাত্র ৩ বছর পড়াশোনা করেই পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীরা চাইলে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করার পর ডিগ্রী কোর্স সম্পন্ন করার মাধ্যমে নিজস্ব যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পারবেন।