উচ্চ মাধ্যমিকের পর কি নিয়ে পড়লে সহজে চাকরি মেলে জেনে নিন।
বিগত ১৯ শে মে তারিখে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আর ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই আগামী দিনে কোন বিষয় কিংবা কোন কোর্স নিয়ে পড়াশোনা করলে অধিক সুবিধা পাওয়া যাবে এবং সহজে চাকরি পাওয়া সম্ভব হবে তা জানতে বারংবার নানা ধরনের প্রশ্ন করেছেন রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ছাত্র-ছাত্রী সহ অভিভাবকেরা। তবে এখানেই শেষ নয়, উচ্চ মাধ্যমিকে কত শতাংশ নম্বর পেলে কোন কোর্সের আওতায় আবেদন করা যাবে, কত শতাংশ নম্বর পেলে অনার্স নেওয়া যাবে অথবা কোন কোর্সটি করলে খুব সহজেই চাকরি পাওয়া যাবে তা নিয়েও রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের মধ্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিকের পর কোন বিষয় নির্বাচন করলে আপনি কি কি সুবিধা পাবেন এবং আগামীতে সহজে চাকরি পাবেন:-
১. প্রবেশিকা পরীক্ষা:- উচ্চ মাধ্যমিকের পর রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, নার্সিং সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। আপনিও যদি মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি নার্সিং, ফার্মেসি, আর্কিটেকচার, এগ্রিকালচার -এর মত কোর্সগুলির আওতায় পড়াশোনা করতে চান তবে সর্বভারতীয় স্তরে গৃহীত এই পরীক্ষাগুলিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা এই সমস্ত পরীক্ষাগুলিতে অংশগ্রহণে উদ্যোগী তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, অনেকক্ষেত্রেই ছাত্র-ছাত্রীরা প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে এই কোর্সগুলোর আওতায় ভর্তি সুযোগ পান না। সুতরাং আপনিও যদি এই কোর্সগুলির আওতায় ভর্তি হতে চান তবে আপনাকে যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রথমবারে না পারলে পরবর্তীতে পুনরায় চেষ্টা করতে হবে। তবে এইসকল প্রফেশনাল কোর্সের আওতায় পড়াশোনা করলে দ্রুত চাকরি পাওয়া সম্ভব।
২. অনার্স নাকি পাশ কোর্স:- যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা অনার্স কিংবা পাস কোর্সের অধীনে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে চান উচ্চ মাধ্যমিকের পর তাদের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে যায়। বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী তাদের পছন্দসই যেকোনো বিষয় নির্বাচন করে অনার্স অথবা পাস কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে মূল প্রশ্ন হচ্ছে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করলে কি সুবিধা পাওয়া যাবে এবং পাস কোর্সে পড়াশোনা করলে কি সুবিধা পাওয়া যাবে? আর এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় যে, যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের পছন্দসই বিষয় নিয়ে আরও বেশি করে জানতে আগ্রহী এবং ভবিষ্যতে শিক্ষাক্ষেত্রে নিজের কেরিয়ার তৈরি করতে উদ্যোগী তারা অবশ্যই তাদের পছন্দমাফিক বিষয়টিতে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করবেন।
উচ্চ মাধ্যমিকের পর একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী সাহিত্য, অর্থনীতি, ভূগোল, চলচ্চিত্র, জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন, দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, অংক, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বোটানি, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, এডুকেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস সহ আর্টস, সায়েন্স এবং কমার্সের আওতাধীন নানাবিধ বিষয়ের মধ্যে তার পছন্দমাফিক বিষয়টিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে পারবেন। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার মাধ্যমে একজন ছাত্র বা ছাত্রী NET পরীক্ষা দিয়ে প্রফেসর হতে পারবেন অথবা পরবর্তীতে তার পিএইচডি সম্পন্ন করতে পারবেন। এছাড়াও এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা B.Ed এর মত টিচার্স ট্রেনিং কোর্স সম্পূর্ণ করে উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারবেন। এছাড়াও গ্রাজুয়েশন বা পোস্ট গ্রাজুয়েশন -এর পর বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
অন্যদিকে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা দ্রুত সাফল্য পেতে চান এবং পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন চাকরির কম্পিটিটিভ পরীক্ষাগুলি দিতে চান তারা অবশ্যই পাস কোর্স নির্বাচন করবেন। এক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, এডুকেশন, জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন সহ আর্টস, সাইন্স এবং কমার্সের বিভিন্ন বিষয়গুলির মধ্যে থেকে যেকোনো তিনটি বিষয় নির্বাচন করে পাস কোর্সে পড়াশোনা করতে পারবে।
আরও পড়ুন:- বাড়িতে বসেই মাত্র ২ মিনিটে লোকাল ট্রেনের টিকিট বুক করুন।
৩. ডিএলএড কোর্স:- যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিজেদেরকে ক্যারিয়ার তৈরি করতে চান তারা উচ্চমাধ্যমিকের পর ডিএলএড কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। যদিও অনেকেই গ্রাজুয়েশনের পরও ডিএলএড কোর্সে ভর্তি হয়ে থাকেন, তবে যারা দ্রুত সাফল্য পেতে চান তারা উচ্চ মাধ্যমিকের পরই ডিএলএড কোর্সে ভর্তি হয়ে নিজেদের কেরিয়ার তৈরির দিকে মনোনিবেশ করতে পারবেন।
৪. অন্যান্য প্রফেশনাল কোর্স:- উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের পছন্দ অনুসারে ভ্রমণ ও পর্যটন ব্যবস্থাপনা, ফ্যাশন ডিজাইনিং, অ্যানিমেশন ডিজাইনিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মতো প্রফেশনাল কোর্সগুলিতে ভর্তি হয়ে নিজেদের স্বপ্ন সত্যি করার সুযোগ পেয়ে যান। তবে এখানেই শেষ নয় এর পাশাপাশি রয়েছে ফটোগ্রাফি, ওয়েব ডিজাইনিং, অ্যানিমেশন, জেমোলজি -এর মত বিষয়গুলি। এছাড়াও UGC এবং AICTE এর তরফে কার্যকরী নানা ধরনের প্রফেশনাল কোর্স রয়েছে। এই সমস্ত কোর্সের আওতায় শিক্ষা গ্রহণ করে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারবেন।
৫. একের অধিক কোর্সের অধীনে পড়াশোনা:- যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা একই সাথে একই অধিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী তাদের জন্য ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন বা UGC -এর তরফে এক বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। এই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল যে, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন তারা চাইলে একইসাথে দুটো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর একজন পড়ুয়া একটি ডিগ্রী কোর্সের পাশাপাশি অপর একটি ডিপ্লোমা, ডিগ্রী কোর্স অথবা সার্টিফিকেট কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। সুতরাং আপনিও যদি একের অধিক কোর্সে পড়াশোনা করতে চান তবে আপনি তাও করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাইন্সের বিষয়গুলি নিয়ে পড়লে অত্যন্ত দ্রুত সাফল্য পাওয়া যাবে অথবা আর্টসের বিষয় নিয়ে পড়লে পরবর্তীতে কোনরূপ সাফল্য পাওয়া যাবে না এই সমস্ত ধারণাগুলি সম্পূর্ণভাবে ভুল। যেকোন বিষয় নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করলে পরবর্তীতে অবশ্যই সাফল্য লাভ হবে। আগামী দিনে কোন বিষয় নিয়ে পড়লে অথবা কোন কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করলে যথেষ্ট তাড়াতাড়ি সাফল্য মিলবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার বদলে নিজের পছন্দ মাফিক বিষয়টিকে বেছে নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করলে আগামীতে অবশ্যই সাফল্য মিলবে।