আবেদন করুন বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তি স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান ৪৮,০০০ টাকার অনুদান।

পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রীদের বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহিত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তি কার্যকর করা হয়েছিল। আর ইতিমধ্যেই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই স্কলারশিপের সুনাম রীতিমতো শীর্ষে পৌঁছেছে। জুন মাসের শুরুতে চলতি বছরের জন্য বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হলে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রীদের মধ্যে এই বৃত্তি নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক:-

বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তি কি?

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় বিশেষভাবে উৎসাহিত করার জন্য জগদীশ বোস ন্যাশনাল সাইন্স ট্যালেন্ট সার্চ কলকাতা ফাউন্ডেশন -এর মারফত এই বৃত্তি কার্যকর করা হয়েছে। এই বৃত্তির আওতায় পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের ছাত্রীদের বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুদান থেকে শুরু করে ল্যাপটপ পর্যন্ত প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে এই বৃত্তির আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের বেশ কতগুলো শর্ত পূরণ করতে হয়। আর বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তগুলি হল:

১. যেসকল ছাত্রীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বর্তমানে একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন, তারা এই বৃত্তির আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। তবে এই বৃত্তির আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্রীকে মাধ্যমিক পরীক্ষার নূন্যতম ৭৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
২. যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বর্তমান স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন, তারা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে জগদীশ বোস ন্যাশনাল সাইন্স ট্যালেন্ট সার্চ, কলকাতা ফাউন্ডেশন -এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, BSc পাস কোর্স, BSc নার্সিং কিংবা ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন না।
৩. যে সমস্ত ছাত্রীরা ২০২৩ সালের পূর্বে মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা কোনভাবেই এই বৃত্তির আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন না।

বিজ্ঞানী কন্যা মেধাবৃত্তির আওতায় ছাত্রছাত্রীরা কত টাকার অনুদান পাবেন?

জগদীশ বোস ন্যাশনাল সাইন্স ট্যালেন্ট সার্চ, কলকাতা ফাউন্ডেশন -এর তরফে কার্যকর তথ্য অনুসারে বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির যোগ্যতা নির্ধারণ এবং আবেদনের সুবিধার খাতিরে এই বৃত্তিকে মূলত ২ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। আর এই ২ টি বিভাগ হল: জুনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তি এবং সিনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তি।

১. জুনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তি:- মূলত মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে পাঠরত ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। এক্ষেত্রে জুনিয়ার বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির আওতাভুক্ত ছাত্রীদের প্রত্যেক মাসে ১২৫০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই বৃত্তির আওতায় প্রত্যেক বছর ছাত্রীরা ১৫০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। এছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের বই কেনার জন্য প্রত্যেক বছরে ২৫০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।

gamezop ad

২. সিনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তি:- উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে যে সমস্ত ছাত্রীরা বর্তমানে স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় জানাতে পারবেন। এই স্কলারশিপের আওতাভুক্ত ছাত্রীদের প্রত্যেক মাসে ৪০০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই স্কলারশিপের আওতাভুক্ত ছাত্রীরা এক বছরে ৪৮ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি এই স্কলারশিপের সুবিধাভোগী ছাত্রীদের বই কেনার জন্য ৫০০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সিনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধাবৃত্তি স্কলারশিপ -এর প্রথম ১০ জন ছাত্রীকে ল্যাপটপ প্রদান করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:- প্রধানমন্ত্রী শৌচালয় যোজনায় আবেদন করুন এবং পেয়ে যান ১২,০০০ টাকা অনুদান।

ছাত্রীদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া কিরূপ?

জুনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রীদের জুনিয়র ট্যালেন্ট সার্চ টেস্টে অংশগ্রহণ করতে হয়। এক্ষেত্র যে সমস্ত ছাত্রীরা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন তাদের জুনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা স্কলারশিপের অধীনে অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। এই পরীক্ষায় পূর্ণমান ৯০, এর মধ্যে ৩০ নম্বরের ভৌত বিজ্ঞানের প্রশ্ন থাকে, ৩০ নম্বরের জীবন বিজ্ঞানের প্রশ্ন থাকে এবং ৩০ নম্বরের অংকের প্রশ্ন থাকে। প্রশ্নপত্রের উত্তর করার জন্য ছাত্রীদের ২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।

সিনিয়ার ট্যালেন্ট সার্চ টেস্টের মাধ্যমে জুনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধাবৃত্তির আওতাভুক্ত ছাত্রীদের নির্বাচন করা হয়ে থাকে। যেসকল ছাত্রীরা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তারাই কেবলমাত্র এই স্কলারশিপের অধীনে অনুদান পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ছাত্রীদের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং ৩ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়ে থাকে।

বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়া:-

১. এই স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্রীকে প্রথমেই জগদীশ চন্দ্র বোস ন্যাশনাল সাইন্স ট্যালেন্ট সার্চ, কলকাতা ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://jbnsts.ac.in/ এ যেতে হবে।

২. এরপর জুনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধাবৃত্তির আওতায় আবেদনের জন্য হোম পেইজে থাকা Junior Talent Search Test / Junior Bigyani Kanya Medha Britti 2023 অপশনটি নির্বাচন করুন এবং সিনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় আবেদনের জন্য Senior Talent Search Test / Senior Bigyani Kanya Medha Britti অপশনে ক্লিক করুন।

bigyani-kanya-medha-britti-scholarship

৩. পরবর্তীতে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে আপনি জুনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধাবৃত্তি অথবা সিনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্যগুলি দেখতে পাবেন। এই সমস্ত তথ্য পড়ে নেওয়ার পর এই পেজের নিচের দিকে থাকা Apply online for Senior Talent Search Test / Senior Bigyani Kanya Medha Britti 2023 কিম্বা Apply online for Junior Talent Search Test / Junior Bigyani Kanya Medha Britti 2023 অপশনে ক্লিক করুন।

৪. উপরোক্ত অপশন একটি করলে আপনার সামনে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। এই ফর্মে আপনাকে আপনার নাম, আপনার পিতার নাম, পরিবারের বাৎসরিক আয়, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকার তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

৫. সমস্ত তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদান করা হলে সমস্ত নথিগুলি সঠিকভাবে আপলোড করে ক্যাপচা কোডটি পূরণ করে Final Submission অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে ফর্মটি জমা করুন। এরপর অনলাইন পেমেন্টের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-

১. আবেদনকারী ছাত্রীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
২. আবেদনকারী ছাত্রীর স্বাক্ষর।

আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফি:-

জগদীশ চন্দ্র বোস ন্যাশনাল সাইন্স ট্যালেন্ট সার্চ, কলকাতা ফাউন্ডেশনের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, জুনিয়ার বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা ফি হিসেবে জমা করতে হবে। অন্যদিকে সিনিয়র বিজ্ঞানী কন্যা মেধা বৃত্তির আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে ২০০ টাকার আবেদন ফি জমা করতে হবে।

আবেদনের সময়সীমা:-

০১/০৬/২০২৩ তারিখ থেকে শুরু করে ০১/০৭/২০২৩ তারিখ পর্যন্ত এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানো যাবে। এক্ষেত্রে ২০/০৮/২০২৩ তারিখে ছাত্রীদের পরীক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে।

Related Articles

Back to top button