বাড়িতে বসে খুব সহজেই ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করুন। জানুন পদ্ধতি।

বর্তমানে সমগ্র ভারতের বহু সংখ্যক মানুষই নিজস্ব ব্যবসা তৈরি করতে ইচ্ছুক। তবে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে বেশ কতগুলি আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়, নাহলে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়গুলি আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে। এমনকি যথেষ্ট জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে আপনার ব্যবসার ক্ষতিও হতে পারে। তবে সমগ্র ভারত কিংবা পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো ক্ষেত্রে ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর বর্তমানে সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে এমন এক বিশেষ ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে যার মাধ্যমে আপনারা বাড়িতে বসেই নিজস্ব ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে নিতে পারবেন। তবে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদনের পূর্বে ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানা অত্যাবশ্যক। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।

ভারতের যেকোনো জায়গায় নতুন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে উক্ত রাজ্যের রাজ্য সরকারের থেকে এক বিশেষ অনুমতি পত্র নিতে হয়। আর এই অনুমতিপত্রই সমগ্র ভারত জুড়ে ট্রেড লাইসেন্স নামে পরিচিত। অর্থাৎ আপনি যদি সারা ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো জায়গায় নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনার অতি অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হবে।

ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা কি কি সুবিধা পাবেন?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবসা শুরু করার সময় প্রয়োজনীয় মূলধনের জোগানের জন্য ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে থাকেন। এমনকি অনেকক্ষেত্রেই নিজের ব্যবসাটিকে বাড়ানোর জন্যও ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে থাকেন। সুতরাং আপনিও যদি নিজস্ব ব্যবসাটিকে বাড়ানোর জন্য লোন নিতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন, তবে আপনার অতি অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে আপনি যদি যেকোন ব্যাংকের অধীনে নিজস্ব কোম্পানি কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে চান, তবে অ্যাকাউন্ট ওপেন করার ক্ষেত্রেও ট্রেড লাইসেন্স অতি অবশ্যই প্রয়োজন হতে চলেছে। এর পাশাপাশি আপনার ব্যবসার ইন্সুরেন্স করার ক্ষেত্রেও ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হবে।

তবে এখানেই শেষ নয় ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আপনি আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ইমপোর্ট এবং এক্সপোর্ট করতে পারবেন না। অর্থাৎ ব্যবসায়িক দ্রব্যগুলি ইমপোর্ট ও এক্সপোর্ট করার জন্য ট্রেড লাইসেন্সের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যদিকে, GST, ESI -এর রেজিস্ট্রেশনের জন্যেও আপনার ট্রেড লাইসেন্স অত্যাবশ্যক। এছাড়াও আপনি যে এলাকায় ব্যবসা করছেন সেই এলাকার ব্যবসায়ী সমিতি কিংবা শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও আপনার ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হতে চলেছে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আপনি কোনভাবেই এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না। নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে আরও জানিয়ে রাখি যে, ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা আইনগত অপরাধ। সুতরাং যেকোনো রকম ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই নিজস্ব ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে নিন।

আরও পড়ুন:- আবেদন করুন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন স্কলারশিপের আওতায় এবং পেয়ে যান সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকার অনুদান।

gamezop ad

কিভাবে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানাতে হবে?

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফ এমন এক বিশেষ পদক্ষেপ কার্যকর করা হয়েছে যার মাধ্যমে আপনারা বাড়িতে বসেই নিজস্ব ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে নিতে পারবেন। তবে এই জন্য আপনাকে কতগুলি সহজ সরল ধাপ অনুসরণ করতে হবে, আর এই ধাপগুলি হল:-

১. আপনিও যদি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে প্রথমেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে কার্যকরী ডিপার্টমেন্ট অফ পঞ্চায়েত রাজ এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট -এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://wbprdgpms.in/ -এ যেতে হবে।

২. পরবর্তীতে উপরোক্ত ওয়েবসাইটের হোম পেইজের Trade N.O.C. অপশনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার সামনে একটি নতুন পেজ চলে আসবে। এক্ষেত্রে আপনার সামনে আসা পেজটিতে যে সমস্ত অপশনগুলি রয়েছে তার মধ্যে থেকে Online Single Window Portal অপশনটি বেছে নিন এবং পুনরায় আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তাতে থাকা Create New অপশনে ক্লিক করুন।

trade-licence

৩. এরপর এই পেজে থাকা চেক বক্সে ক্লিক করুন এবং Proceed For Registration অপশনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস সহ অন্যান্য তথ্যগুলি সঠিকভাবে প্রদান করার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার পর পুনরায় Trade N.O.C অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তার ডানদিকে থাকা ড্যাশবোর্ডে ক্লিক করুন।

৪. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার সামনে যে অপশনগুলি আসবে তার মধ্যে থেকে ALL SERVICES অপশনে ক্লিক করুন। তারপর আপনার সামনে পুনরায় যে নতুন পেজটি আসবে তার ডান দিকে থাকা Search বারে Trade লিখে সার্চ করুন।

৫. উপরোক্ত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলে আপনার সামনে P & RD এবং UD & MA নামক দুটি অপশন আসবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি পঞ্চায়েতের অধীনে আবেদন জানাতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন, তবে P & RD অপশনটি নির্বাচন করে নিন এবং Create CAF অপশনে ক্লিক করুন। অন্যদিকে, আপনি যদি মিউনিসিপ্যালিটির অধীনে আবেদন জানাতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তবে UD & MA অপশনটি নির্বাচন করে Create CAF অপশনে ক্লিক করুন।

৬. উপরোক্ত প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করলেই আপনার সামনে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। এই ফর্মটিতে আপনার জেলা, ব্লক, সাব ডিস্ট্রিক্ট গ্রাম পঞ্চায়েত বা মিউনিসিপ্যালিটি, ব্যবসার ধরন, ব্যবসার নাম, আপনার দোকান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ ঠিকানা সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যগুলি নির্ভুলভাবে পূরণ করুন। এরপর উক্ত ফর্মে আপনার নাম, আপনার পিতার নাম, আইডেন্টিটি প্রুফ (আধার কার্ড/ ড্রাইভিং লাইসেন্স/ ভোটার কার্ড/ প্যান কার্ড/ জব কার্ড/ পাসপোর্ট/ রেশন কার্ড), আইডেন্টিটি প্রুফের নম্বর, মোবাইল নম্বর, ব্যবসার মালিকানা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করুন।

৭. পরবর্তীতে এই ফর্মে আপনার ঠিকানাটি সঠিকভাবে লিখুন এবং আপনার কোম্পানির অথবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম, আপনার কোম্পানি কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কতজন সদস্য কাজ করছেন, আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন, আপনি ব্যবসয়ায় কত টাকা আয় করেছেন, প্রফেশনাল ট্যাক্স দেওয়া হয় কিনা তা সংক্রান্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে লিখুন এবং Save and Continue অপশনে ক্লিক করুন।

৮. সমস্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে প্রদান করা হলে ফর্মে ডকুমেন্টগুলি আপলোড করে Save and Continue অপশনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার সামনে সম্পূর্ণ ফর্মটির একটি প্রিভিউ চলে আসবে। ফর্মের প্রিভিউতে সমস্ত তথ্য ঠিক থাকলে পেজটির নিচে থাকা চেক বক্সে ক্লিক করুন এবং Submit অপশনে ক্লিক করুন। সবশেষে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় ফি পেমেন্টের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলেই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।

আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-

১. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করার আইডেন্টিটি প্রুফ (আধার কার্ড/ ড্রাইভিং লাইসেন্স/ ভোটার কার্ড/ প্যান কার্ড/ জব কার্ড/ পাসপোর্ট/ রেশন কার্ড)।
২. আবেদনকারীর জমির রেকর্ড।

Related Articles

Back to top button