আবেদন করুন স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান সর্বোচ্চ ৯৬ হাজার টাকা।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের অর্থ সাহায্য প্রদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, প্রকল্প এবং স্কিম কার্যকর করা হয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই সমস্ত প্রকল্প এবং স্কলারশিপগুলির মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপটি সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১৬ লক্ষেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের অধীনে অনুদানের টাকা পেয়েছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারেন।

কারা স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবে:-

১. স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী পড়ুয়াকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২. আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ২,৫০,০০০ টাকা বা তার চেয়ে কম হতে হবে।
৩. স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফে স্বীকৃত যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত হতে হবে।
৪. অন্য যেকোন সরকারি স্কলারশিপের সুবিধা পেলে এই স্কলারশিপের সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়।

আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক শিক্ষাগত যোগ্যতা:-

১. মাধ্যমিকে ৬০% নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা সাইন্স, আর্টস অথবা কমার্স নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
২. যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিকে ৬০ % নম্বর নিয়ে বর্তমানে স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষে সাইন্স, আর্টস অথবা কমার্স বিভাগে পড়াশোনা করছেন তারাও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৩. যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতক স্তরে ৫৩% নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে সাইন্স, আর্টস অথবা কমার্স বিভাগে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন তারাও এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
৪. যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিকের ৬০% নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং বর্তমানে ডিএলএড কোর্সে ভর্তি হয়েছেন তারাও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

৫. উচ্চ মাধ্যমিকের পর যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং -এর মত প্রফেশনাল কোর্সের আওতায় পড়াশোনা করছেন উচ্চ মাধ্যমিকে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হলেই এই সকল ছাত্র-ছাত্রীরা স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের আওতায় অনুদানের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পাঠরত যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতক স্তরে ন্যূনতম ৫৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন তারাও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৮. উচ্চমাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ নম্বর সহকারে উত্তীর্ণ হয়ে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে পলিটেকনিক সহ অন্যান্য ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করছেন তারাও স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের যোগ্য বলেই বিবেচিত হবে।

আরও পড়ুন:- আবেদন করুন কন্যাশ্রী প্রকল্পে এবং পেয়ে যান এককালীন ২৫,০০০ টাকা।

gamezop ad

স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের আওতায় কোন কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীদের কত টাকার অনুদান প্রদান করা হয়?

১. একাদশ শ্রেণীতে পাঠগত ছাত্র-ছাত্রীদের এই স্কলারশিপের আওতায় ১২,০০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।
২. স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের আওতাধীন স্নাতক স্তরের আর্টস এবং কমার্স বিভাগে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছরে ১২০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে সাইন্স বিভাগে যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন তাদের প্রত্যেক বছরে ১৮,০০০ টাকার অনুদান দেয়া হয়ে থাকে।
৩. এই স্কলারশিপের আওতাভুক্ত যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা মেডিকেল ডিগ্রি এবং ডিপ্লোমা কোর্সে পড়াশোনা করছেন তাদের প্রতি বছরে যথাক্রমে ৬০,০০০ টাকা এবং ১৮,০০০ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে।
৪. ইঞ্জিনিয়ারিং সহ AICTE -এর তরফে স্বীকৃত নানা ধরনের প্রফেশনাল কোর্সে যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছরে ৬০,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে উপরোক্ত কোর্সগুলিতে স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদেরও প্রতি বছরে ৬০,০০০ টাকার অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়ে থাকে।

swami-vivekananda-scholarship

৬. পলিটেকনিক সহ অন্যান্য ডিপ্লোমা কোর্সের আওতায় যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন তাদের এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছরে ১৮,০০০ টাকা করে দেওয়া হয়ে থাকে।
৭. উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যে সকল ছাত্রছাত্রীরা D.El.Ed কোর্সের আওতায় পড়াশোনা করছেন তাদের এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছর ১২০০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়।
৮. যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা UGC অ্যাপ্রুভড প্রফেশনাল কোর্সগুলির আওতায় স্নাতক স্তরে পাঠরত তারা এই স্কলারশিপের অধীনে ১৮,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।
৯. স্নাতকোত্তর স্তরে আর্টস এবং কমার্স বিভাগে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের অধীনে প্রতি বছরে ২৪,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে স্নাতকোত্তর স্তরে সাইন্স শাখায় পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতি বছরে ৩০,০০০ টাকা করে অনুদান পেয়ে থাকেন।
১০. NON NET M.PHIL. অথবা NON NET PH.D. -এর মত কোর্সের আওতাধীন শিক্ষার্থীরা স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের অধীনে প্রতি বছরে ৬০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯৬,০০০ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থী কত টাকা পাবে তা স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের কর্তৃপক্ষের তরফে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

আবেদনের প্রক্রিয়া:-

১. রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য আপনাকে প্রথমেই স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https://svmcm.wbhed.gov.in/ -এ যেতে হবে।
২. এরপর হোম পেজে থাকা Registration বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তার একেবারে নিচের দিকে থাকা চেক বক্সে ক্লিক করে Proceed for Registration অপশনে ক্লিক করুন।
৩. পরবর্তীতে আপনার সামনে আসা পেজটিতে আপনার যোগ্যতা অনুসারে ক্যাটেগরি সিলেক্ট করুন এবং Apply for fresh application বাটনে ক্লিক করুন।
৪. এরপর আপনার সামনে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। এই ফর্মের একেবারে শুরুতেই আপনি সর্বশেষ কোন পরীক্ষাটি দিয়েছেন, কোন বোর্ড থেকে পরীক্ষাটি দিয়েছেন, কত সালে পরীক্ষা দিয়েছেন, পরীক্ষার মোট নম্বর, পরীক্ষায় কত নম্বর পেয়েছেন, ক্লাস টেনের পরীক্ষার রোল নম্বর, কত শতাংশ নম্বর পেয়েছেন, বর্তমানে আপনি কোন কোর্সে পড়াশোনা করছেন তা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
৫. তারপর আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং আপনার পছন্দ অনুসারে একটি পাসওয়ার্ড নির্বাচন করে Register অপশনে ক্লিক করতে হবে। উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলেই আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে একটি OTP চলে আসবে। ওই OTP টি সঠিকভাবে লিখে Verify অপশনে ক্লিক করতে হবে। উপরোক্ত প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করলেই রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে এবং আপনার সামনে আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডিটি চলে আসবে।
৬. এরপর আপনাকে পুনরায় হোম পেজে চলে আসতে হবে এবং হোম পেজের উপরের দিকে থাকা Applicant Login অপশনে ক্লিক করতে হবে এবং আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডি পাসওয়ার্ড এর মাধ্যমে লগইন -এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।
৭. পরবর্তীতে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে থাকা Edit Profile অপশনে আপনাকে ক্লিক করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করে Save and Continue অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৮. এরপর আপনার সামনে পুনরায় একটি নতুন পেজ আসবে যাতে আপনাকে আপনার অভিভাবকের নাম, অভিভাবকের পেশা সংক্রান্ত তথ্য, আপনার পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য এবং আপনার ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। তারপর পুনরায় Save and Continue অপশনে ক্লিক করুন।
৯. সবশেষে প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করে চেক বক্সে ক্লিক করে Submit অপশনে ক্লিক করলেই আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে যাবে।

আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-

১. পরিবারের বাৎসরিক আয়ের সার্টিফিকেট।
২. ভর্তির রশিদ।
৩. ব্যাংকের পাস বই।
৪. আধার কার্ড।
৫. সর্বশেষ পরীক্ষার মার্কশীট।
৬. মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশিট।

Related Articles

Back to top button