ই-শ্রম কার্ডের আওতায় কি কি সুবিধা পাবেন জেনে নিন।
সমগ্র ভারতের দরিদ্র শ্রমজীবী আর্থিকভাবে দুঃস্থ পরিবারগুলির সাধারণ জনগণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকার পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সমগ্র দেশের দরিদ্র জনগণের জন্য কার্যকরী এমনই এক বিশেষ পরিকল্পনা হলো ই-শ্রম কার্ড।
ই-শ্রম কার্ড প্রকল্প কি?
সমগ্র দেশের দরিদ্র জনসাধারণের উন্নতির খাতিরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে সমস্ত প্রকল্পগুলি কার্যকর করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি প্রকল্প হল ই-শ্রম কার্ড। মূলত দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত দরিদ্র, শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়ন এবং আর্থিক উন্নয়নের খাতিরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ই-শ্রম কার্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০২২ সালের শেষে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছিল যে, সমগ্র দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের যেসকল শ্রমিক রয়েছে তার মধ্যে থেকে ২৮ কোটি শ্রমিক ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী ই-শ্রম পোর্টালের অধীনে নিজেদের নাম রেজিস্টার করেছেন। আগামী দিনে আরো বহু সংখ্যক শ্রমিক ই-শ্রম পোর্টালের অধীনে নিজেদের নাম রেজিস্টার করবেন বলেই আশা রাখছেন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা। আগামী দিনে ই-শ্রম কার্ডের মাধ্যমে অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের আর্থিক উন্নয়ন এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জনগণকে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানো যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে ভারতের কেন্দ্র সরকারের কর্মকর্তাদের তরফে।
ই-শ্রম কার্ডের আওতায় কি কি সুবিধা পাওয়া সম্ভব?
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ই-শ্রম পোর্টালের আওতায় অসংগঠিত ক্ষেত্রের যে সমস্ত শ্রমিকরা নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন তারা ৬০ বছর বয়সের পর পেনশন পাবেন। অন্যদিকে যে সমস্ত শ্রমিকদের ই-শ্রম কার্ড রয়েছে তাদের প্রত্যেক মাসে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়ে। মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক তাদের পরিবার এবং সন্তানের উন্নতির জন্যই এই বিশেষ অনুদান প্রদানের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়েছে। অন্যদিকে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের বৃদ্ধ বয়সে বিশেষ সহায়তা প্রদানের জন্য ই-শ্রম কার্ডের আওতায় পেনশন দেবার প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকায়।
আরও পড়ুন:- বাড়িতে বসেই এই বিশেষ পদ্ধতিতে নিজের ইলেকট্রিক বিল দ্রুত জমা করুন।
এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকায় আরো জানানো হয়েছে যে, ই-শ্রম যোজনার আওতাভুক্ত কোন শ্রমিক যদি কোনো দুর্ঘটনার কারণে অথবা অসুস্থতার কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যান তবে উক্ত শ্রমিককে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ১ লক্ষ টাকার অনুদান প্রদান করা হবে। অন্যদিকে ই-শ্রম কার্ড রয়েছে এরকম কোনো শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে উক্ত শ্রমিকের আইনি উত্তরাধিকারী কিংবা পরিবারকে ২ লক্ষ টাকার অর্থ সাহায্য প্রদান করা হয়ে থাকে। মূলত ই-শ্রম পোর্টালে রেজিস্টার্ড শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা বীমা যোজনার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার ফলে আংশিক অক্ষমতার কারণে উক্ত শ্রমিককে বীমার সাহায্য প্রদান করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে ই-শ্রম কার্ডের আওতাধীন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে উক্ত শ্রমিকের পরিবারকে এই নির্ধারিত টাকার অংক প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়াও ই-শ্রম যোজনার আওতাভুক্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের পরিবারের উন্নয়নের খাতিরে সাইকেল, সেলাই মেশিন থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তু প্রদান করা হয়ে থাকে।
তবে ই-শ্রম কার্ডের আওতাধীন ব্যক্তিরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকে তা জানলেই তো হলো না, কারা ই-শ্রম কার্ডের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন তা সম্পর্কেও তথ্য জানা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্যে যে যে শর্তগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো:-
১. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ভারতের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ব্যক্তিরাই কেবলমাত্র ই-শ্রম কার্ডের আবেদন জানাতে পারবেন।
২. ভারতে বসবাসকারী অসংগঠিত কেন্দ্রের শ্রমিকরাই শুধুমাত্র ই-শ্রম কার্ডের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন, এমনটাই জানা গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুসারে।
৩. বর্তমানে ভারতে বসবাসকারী যে সমস্ত শ্রমিকের নাম EPFO এবং ESIC-এর আওতাভুক্ত রয়েছে কিংবা যেসমস্ত শ্রমিকরা আয়কর প্রদান করে থাকেন তারা কোনভাবেই ই-শ্রম পোর্টালের অধীনে নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না।
৪. ভারতে বসবাসকারী যে সমস্ত শ্রমিকরা যেকোনো সরকারি পেনশন যোজনার সুবিধা পেয়ে থাকেন অথবা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনার সুবিধা পেয়ে থাকেন তারাও কোনোভাবেই এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না।