রাজ্য সরকারের শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় মিলবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হার্টের চিকিৎসার সুযোগ।
শিশুদের মধ্যেই সমগ্র দেশের ভবিষ্যতের বীজ সুপ্ত রয়েছে। আর তাই সারা ভারতের শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু সমগ্র ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম্য অঞ্চলের আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারগুলির শিশু এবং মা উভয়ই সঠিকভাবে পুষ্টিকর খাদ্য পান না, যার কারণে যথাযথ পুষ্টির অভাবে শিশুদের মধ্যে নানাবিধ জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। আর এই অসুস্থতার কারণে অকালেই বহু শিশু সময়ের কোল খালি করে অমৃতলোকে পাড়ি দেয়। আর এই সমস্ত অসুস্থ শিশুদের সুস্থ করে তোলার স্বার্থে রাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলির শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে এক বিশেষ প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকর এই প্রকল্পটি শিশুসাথী প্রকল্প নামে সমগ্র রাজ্যের মানুষের কাছে বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
শিশুসাথী প্রকল্প কি?
পশ্চিমবঙ্গের বহু শিশুই জন্মগত হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে জন্মায়। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে দেখা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের বহু সংখ্যক শিশুর হৃদযন্ত্রের ভাল্বের সমস্যা, হার্টে ছিদ্র থাকার মতো সমস্যা রয়েছে। এছাড়াও কনজেনিটাল কার্ডিয়াল ডিফেক্ট সহ নানাবিধ হৃদযন্ত্রের রোগও শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। আর এই সমস্ত শিশুদের হৃদযন্ত্রের সমস্ত রকম সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে শিশুসাথী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছিল। শিশুসাথী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগদান দিয়েছে কতগুলি সরকারি হাসপাতাল এবং তিনটি নামজাদা বেসরকারি হাসপাতাল। রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিবছর ৩০০০ শিশুর হার্ট সার্জারি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করানো হয়ে থাকে।
কোন কোন হাসপাতালে শিশুসাথী প্রকল্পের চিকিৎসা করানো সম্ভব?
রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, এসএসকেএম, বি.সি রায় মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং আর.জি. কর মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় শিশুদের হার্ট সার্জারি করা সম্ভব। এই সমস্ত সরকারি হাসপাতালে শিশুদের হার্ট চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে, আর তাই রাজ্য সরকারের তরফে এই সমস্ত সরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্বাচন করা হয়েছে। বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টার, কলকাতার আরএন টেগর ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস এবং দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালের অধীনে শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় শিশুদের হার্ট সার্জারি করা সম্ভব।উপরোক্ত সরকারি হাসপাতালগুলির মতোই এই সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে শিশুদের অত্যাধুনিক চিকিৎসার সুবিধা থাকায় এই সকল বেসরকারি হাসপাতাল গুলিতে শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় অসুস্থ শিশুদের হৃদযন্ত্রের চিকিৎসা করানো সম্ভব।
আরও পড়ুন:- চাকরি নাকি ব্যবসা কোনটি আপনার জন্য সেরা। বুঝবেন কিভাবে জেনে নিন।
শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় কি কি সুবিধা পাওয়া যায়?
রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের প্রতিটি শিশু সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হার্ট সার্জারির সুযোগ পাবে। তবে শুধুমাত্র শিশুরা নয় ১২ বছর বা তার থেকে কম বয়সী কিশোর-কিশোরীরাও এই প্রকল্পের আওতায় হার্ট সার্জারি সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ সদ্যোজাত শিশু থেকে শুরু করে ১২ বছর বয়সী সমস্ত শিশু-কিশোররাই শিশুসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। শিশুসাথী প্রকল্পের আওতাধীন সমস্ত শিশুর হার্ট সার্জারির সমগ্র খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি আরো জানিয়ে রাখি যে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে এই প্রকল্পের আওতায় হার্ট সার্জারির সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন শিশুর পরিবারের বাৎসরিক আয়ের দিকটি নজরে রাখা হয় না। এমনকি শিশুটি এপিএল পরিবারভুক্ত নাকি বিপিএল পরিবারভুক্ত তাও বিবেচনা করা হবে না। অর্থাৎ যেকোনো জাতিগোষ্ঠী, যেকোনো পরিবারভুক্ত শিশুই শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হার্টের চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাবেন কিভাবে?
শুধুমাত্র অফলাইনের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানো সম্ভব। এই প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার জেলার CMOH -এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়াও আপনি ব্লক স্তরের BMOH কিংবা কলকাতার DFWO -এর সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে এই প্রকল্পের আওতায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হার্টের চিকিৎসার সুবিধা পেতে পারবেন। শিশুসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনরকম অসুবিধা না হয় তার জন্য এই প্রকল্প আওতায় শিশুর হার্টের চিকিৎসার ক্ষেত্রে শিশুর পিতা, মাতা কিংবা অভিভাবককে সমস্ত রকম সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্লক এবং জেলাস্তরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অনেক সময়ে দেখা যায়, বহু সংখ্যক শিশুর হার্টের সমস্যা সঠিক সময় ধরা না পড়ার কারণে সেই রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি শিশুর হার্টের রোগ সঠিক সময়ে না ধরা পড়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের বাঁচানো সম্ভব হয় না। আর তাই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সমস্ত সরকারি স্কুল এবং সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ছাত্র-ছাত্রীদের হেলথ টেস্ট করানো হয়ে থাকে। আর রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই শুভ উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মধ্যে বারংবার প্রশংসিত হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত এই প্রকল্পের আওতায় কনজেনিটাল ক্যাটার্যাক্ট, ক্লেফট লিপ, ক্লেফট প্যালেটের মত সমস্যাগুলির চিকিৎসার সুবিধা প্রদানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আর তাতেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী শিশুসাথী প্রকল্প এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় বারংবার পঞ্চমুখ হয়েছেন সমগ্র রাজ্যে সাধারণ জনগণ সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।