সদ্যোজাত শিশুদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর তরফে দেওয়া হবে এক বিশেষ উপহার। বিস্তারিত জেনে নিন।
মানুষের সবচেয়ে উপকারী বন্ধু হল গাছ, কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ অরণ্য ধ্বংসে মত্ত হয়েছে। ক্রমাগত হারে গাছ কাটার ফলে সমগ্র ভারত জুড়ে ক্রমগত হারে গাছের সংখ্যা কমছে বলেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে। আর এক্ষেত্রে কোনোভাবেই বাদ পড়েনি পশ্চিমবঙ্গের নামও। আর তাতেই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গকে পুনরায় সবুজ করে তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এক বিশেষ পদক্ষেপ কার্যকর করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আগামী দিনে সমগ্র রাজ্যজুড়ে সবুজের বিকাশ ঘটানো সম্ভব হবে বলেই মনে করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের তরফে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে, সমগ্র রাজ্যজুড়ে সবুজায়নের বিকাশ ঘটানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে সবুজশ্রী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো ক্ষেত্রে সদ্য জন্মগ্রহণ করা শিশুর পরিবারকে একটি মূল্যবান গাছের চারা প্রদান করা হয়ে থাকে। রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকা অনুসারে, সদ্যজাত শিশুর নামে ওই গাছটির নামকরণ করতে হবে এবং উক্ত চারা গাছটিকে শিশুর মতই যত্ন সহকারে লালন-পালন করে বড় করে তুলতে হবে। শিশুটি বড় হয়ে গেলে ওই গাছের দায়িত্ব এবং মালিকানা সম্পূর্ণভাবে শিশুর ওপর ন্যস্ত করা হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট মহলের কর্মকর্তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে যে, ২০১৬ সালের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে সবুজশ্রী প্রকল্প নামে এই বহুমুখী পরিকল্পনাটি কার্যকর করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে নবজাতকের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উন্নয়ন করা সম্ভব।
সবুজশ্রী প্রকল্পের আওতাধীন ব্যক্তিরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন?
১. রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা এক নির্দেশিকা মারফত সমগ্র রাতের সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, শিশুর জন্মের সময় যে মূল্যবান চারা গাছটি প্রদান করা হবে তা পরবর্তীতে মহীরুহ বৃক্ষে পরিণত হবে, যার বাজার মূল্য যথেষ্ট বেশি। পরবর্তীতে শিশুর যেকোনো রকম আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য উক্ত গাছটিকে কেটেও ফেলা যাবে বলেই জানানো হয়েছে সবুজশ্রী প্রকল্পের কর্মকর্তাদের তরফে। রাজ্যের সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, সবুজশ্রী প্রকল্পের আওতায় রাজ্য সরকারের তরফে শাল, সেগুন থেকে শুরু করে নানা ধরনের মূল্যবান গাছ প্রদান করা হয়ে থাকে, সুতরাং যেকোনো পরিস্থিতিতে ওই গাছটি বিক্রি করে একজন নাগরিক যথেষ্ট অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- এবার থেকে বিদ্যুৎ বিলেও মিলবে বিশেষ ছাড়। কারা পাবেন এই বিশেষ ছাড়, জেনে নিন।
২. সবুজশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী দিনে সমগ্র বাংলা জুড়ে সবুজায়ন কর্মসূচি কার্যকর করা সম্ভব হবে বলেই মনে করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে। ফলত এই প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে সমগ্র রাজ্যের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে আগামী দিনের শিশুরাও উপকৃত হতে চলেছেন। এমনকি এই সবুজশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে মানব শিশু এবং গাছের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক পুনরায় আদিম যুগের মত নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব, এমনটাই দাবি করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলের বিশিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের তরফে।
৩. সবুজশ্রী প্রকল্পের কর্মকর্তাদের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানানো হয়েছে যে, সবুজশ্রী প্রকল্পের অধীনে সদ্যজাত শিশুকে যে চারাগাছ প্রদান করা হবে সেটিকে নিজের বাড়ির উঠোনে কিংবা বাগানে লাগাতে হবে। তবে কোনো ব্যক্তির বাড়িতে যদি গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে তবে তিনি তার বাড়ির নিকটবর্তী প্রাথমিক স্কুলের মাঠে এসে সবুজশ্রী প্রকল্পের চারাগাছটি লাগাতে পারবেন। সুতরাং যে সমস্ত নাগরিকদের বাড়িতে চারাগাছ লাগানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই তারা নিজের বাড়ির নিকটবর্তী প্রাথমিক স্কুলের মাঠে গিয়েও সবুজশ্রী প্রকল্পের গাছটি লাগাতে পারবেন এবং গাছটিকে পর্যাপ্ত যত্ন সহকারে লালন পালন করতে পারবেন।
কিভাবে মিলবে সবুজশ্রী প্রকল্পের চারাগাছ?
২০১৬ সালের সবুজশ্রী প্রকল্প কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গবাসীর উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছিল যে, বন দপ্তরের তরফে নতুন মা এবং সদ্যোজাত শিশুর হাতে সবুজশ্রী প্রকল্পের চারাগাছ তুলে দেওয়া হবে। বিভিন্ন সূত্রের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে, বন দপ্তরের উদ্যোগে ব্লক প্রশাসনের তরফে সমগ্র রাজ্যের সদ্যজাত শিশুদের বাড়িতে পৌঁছে শিশুর পরিবারের হাতে চারাগাছ তুলে দেওয়ার উদ্যোগ করা হয়েছিল। কিন্তু এই উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় বন দপ্তরের তরফে সিদ্ধার্থ নেওয়া হয়েছিল যে আগামী দিনে হাসপাতালে পক্ষ থেকে মা এবং সদ্যোজাত শিশুদের চারাগাছ প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে সবুজশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনোরকম ফর্ম পূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের পর প্রত্যেক শিশুর মাকে সবুজশ্রী প্রকল্পের আওতাধীন এই চারাগাছ প্রদান করা হয়ে থাকে।