আবেদন করুন কৃষক বন্ধু প্রকল্পে এবং প্রতি বছর পেয়ে যান ১০ হাজার টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রকার প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য কার্যকরী এই সমস্ত প্রকল্পগুলির মধ্যে কৃষক বন্ধু প্রকল্প অন্যতম উল্লেখযোগ্য। পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী কৃষকরা কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি কেনার ক্ষেত্রে যাতে কোনোভাবেই ঋণগ্রস্ত না হয়ে পড়ে তা সুনিশ্চিত করতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে কৃষক বন্ধু প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কার্যকর দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পের মাধ্যমে বহু সংখ্যক কৃষক কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। আর তার কিছুদিন পরেই মে মাসের শেষদিকে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের খারিফ সিজনের অনুদান দেওয়ার প্রক্রিয়া কার্যকর করা হলে।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় কারা আবেদন জানাতে পারবেন?
১. পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ১৮ বছর বয়সী কৃষক থেকে শুরু করে ৪০ বছর বয়সী কৃষকরা, কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
২. যে সমস্ত পরিবারের একাধিক সদস্য কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত সেই সমস্ত পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন, তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেক সদস্যের আলাদা আলাদা জমি থাকা আবশ্যক।
৩. কৃষি দপ্তরের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, যে সমস্ত কৃষকরা কেন্দ্র সরকারের তরফে কার্যকর পি এম কিষাণ প্রকল্পের আওতায় অনুদান পেয়ে থাকেন তারাও কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৪. পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যে সমস্ত কৃষকের নিজস্ব জমি রয়েছে কিন্তু তারা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের অধীনে কর্মরত কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কর্মরত, সেই সকল কৃষকরা কোনভাবেই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় একজন কৃষক প্রতি বছরে ৪০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। যদিও কৃষকরা কত টাকা পাবেন তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে তার জমির পরিমাণের উপরে। যেসকল কৃষকদের বর্তমানে ৬ শতক কিংবা তার চেয়ে কম পরিমাণ জমি রয়েছে তারা প্রত্যেক বছর কৃষক বন্ধু প্রকল্প থেকে ৪,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। আবার যে সমস্ত কৃষকদের ১ একর কিংবা তার বেশি পরিমাণ জমির রয়েছে তারা কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় ১০,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। যদিও কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধাভোগী কৃষকরা এই সম্পূর্ণ টাকাটি একেবারে পান না। কৃষক বন্ধু প্রকল্পের অনুদানের টাকা কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুটি কিস্তিতে ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে।
তবে এখানেই শেষ নয়, কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধাভোগী কোন কৃষক মারা গেলে ওই কৃষকের পরিবার কিংবা আইনসম্মত উত্তরাধিকারীকে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় এককালীন ২ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতাধীন কৃষকদের জন্য কার্যকরী এই বিশেষ সুবিধাটি কৃষক বন্ধু মৃত্যুজনিত সহায়তা বা কৃষক বন্ধু ডেথ বেনিফিট নামে বিশেষ পরিচিত। কোন কৃষকের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী এবং সন্তানরা যাতে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন না হন তার কারণেই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধাভোগী কৃষকদের জন্য মৃত্যুজনিত সহায়তা বা ডেথ বেনিফিট কার্যকর করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতাধীন কৃষকের মৃত্যুর ৩ মাসের মধ্যে ডেথ সার্টিফিকেট সহকারে এই মৃত্যুজনিত সহায়তার জন্য আবেদন জানাতে হবে, তবেই উক্ত ব্যক্তির পরিবার কিংবা আইনসম্মত উত্তরাধিকারী এককালীন ২ লক্ষ টাকার অনুদান পেয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন:- এবার থেকে শনিবারেও পূর্ণদিবস পঠন-পাঠন চলবে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলিতে। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট জেনে নিন।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করবেন কিভাবে?
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে বিডিও অফিস থেকে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি সংগ্রহ করে নিতে হবে। পরবর্তীতে ওই ফর্মে আপনাকে আপনার নাম, আপনার গ্রামের নাম, গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম, থানা, জেলার নাম, পিন কোড, পিতা বা স্বামীর নাম, মোবাইল নম্বর, আধার কার্ড নম্বর, ভোটার কার্ড নম্বর সহ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি সঠিকভাবে উল্লেখ করুন। এরপর আপনার কৃষি জমিটি কোন ব্লকে অবস্থিত, কোন জেলায় অবস্থিত, কোন মৌজায় অবস্থিত তা সঠিকভাবে লিখে নিতে হবে। পরবর্তীতে আপনার কৃষি জমির J. L. নম্বর, খতিয়ান নম্বর এবং একর হিসেবে আপনার পরিমাণ সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার যদি একাধিক কৃষিজমি থেকে থাকে তবে ওই সকল কৃষিজমির সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। পরবর্তীতে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের নাম, ব্যাংকের শাখার নাম, IFSC কোড সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
এরপর আপনাকে আপনার নমিনির নাম, নমিনির পিতা অথবা স্বামীর নাম, জন্ম তারিখ, নমিনির অভিভাবকের নাম এবং নমিনির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক সঠিকভাবে পূরণ করুন। সবশেষে ফর্মে উল্লেখিত তথ্যগুলি সঠিকভাবে প্রদান করুন এবং ফর্মের শেষে তারিখ উল্লেখ্য করে নিজের নাম স্বাক্ষর করুন। এরপর কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় স্বঘোষণা পত্রটিতে আপনার নাম, আপনার পিতার নাম, গ্রাম, ব্লক, গ্রাম পঞ্চায়েত, জমি সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য, আপনি কি কি নথি ফর্মের সাথে অ্যাটাচ করতে চলেছেন সেই সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে স্থান ও তারিখ উল্লেখ করে স্বাক্ষর করুন। এরপর আধার প্রমাণিকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মটিতে আপনার নাম এবং আধার নম্বর সঠিকভাবে উল্লেখ করে মোবাইল নম্বর সঠিকভাবে লিখে স্বাক্ষর করুন। সমস্ত ফর্মগুলি সঠিকভাবে পূরণ করা হলে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নথিগুলি এই সমস্ত ফর্মের সাথে যুক্ত করে বিডিও অফিসে জমা করতে হবে।
এছাড়াও আপনারা দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকেও আপনি কৃষক বন্ধু প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্ম সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ফর্মগুলি সংগ্রহ করার পর একইভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি সহকারে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে জমা দিলেই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-
১. আবেদনকারীর ভোটার কার্ড
২. সাম্প্রতিক বছরের জমির রেকর্ড (যেসমস্ত কৃষকদের রেকর্ড নেই তাদের ক্ষেত্রে পর্চা বা জমির দলিল)।
৩. আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাশ বই।
৪. আবেদনকারী কৃষকের আধার কার্ড।
৫. আবেদনকারীর সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৬. আবেদনকারী কৃষকের নিজের নামে জমি না থাকলে জমির দলিল/ দানপত্র/ দেবত্তর/ অন্যান্য নথি এবং স্বঘোষণা পত্র প্রয়োজন হবে। এর পাশাপাশি পঞ্চায়েত প্রধানের তরফে জারি করা ওয়ারিশ সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
৭. আধার কার্ড এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত রয়েছে এরূপ মোবাইল নম্বর।