আবেদন করুন কন্যাশ্রী প্রকল্পে এবং পেয়ে যান এককালীন ২৫,০০০ টাকা।

সমগ্র ভারতের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুরুষরা শিক্ষাগ্রহণের অধিকার পেলেও নারীরা কোনভাবেই শিক্ষা গ্রহণের অধিকার পান না। যার কারণে ভারতের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনো পর্যন্ত নিরক্ষর। তবে এখানেই শেষ নয়, নিরক্ষরতার পাশাপাশি রয়েছে বাল্যবিবাহ এবং স্কুল ছুটের মতো অভিশাপ। আর তাই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মেয়েদের স্কুলে ফেরাতে এবং শিক্ষার আওতায় আনতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিভিন্ন রাজ্যগুলির রাজ্য সরকারের তরফে নানা ধরনের স্কিম, প্রকল্প এবং স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। আর এই উদ্যোগ থেকে কোনমতেই বাদ যায়নি বাংলার নাম।

পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র, অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণীর মেয়েদের শিক্ষার আওতায় আনতে এবং উচ্চশিক্ষায় ব্রতী করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের তরফে কন্যাশ্রী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের বহু সংখ্যক মেয়েরা অনুদান পেয়ে থাকেন। এমনকি ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত অবস্থায় যে সমস্ত মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন সেই সকল মেয়েদের কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় রাজ্য সরকারের তরফে এককালীন ২৫,০০০ টাকার অনুদান পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে। তবে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের তরফে বেশ কতগুলি শর্ত আরোপ করা হয়েছে, এমনকি বেশ কিছু যোগ্যতাও নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের দরিদ্র, আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর ছাত্রীরা নিজেদের যোগ্যতার নিরিখে এই প্রকল্পের আওতায় অনুদান পেয়ে থাকেন।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় কারা অনুদান পেয়ে থাকেন?

কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনুদান প্রদানের প্রক্রিয়াটিকে সহজ সরল করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে এই প্রকল্পটিকে কে ওয়ান (K1), কে টু (K2) এবং কে থ্রি (K3) এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে প্রত্যেকটি বিভাগের ক্ষেত্রেই আবেদনকারী ছাত্রীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ১,২০,০০০ টাকা বা তার চেয়ে কম হতে হবে, তবেই উক্ত ছাত্রী এই তিনটি বিভাগের যেকোন একটিতে আবেদনের ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

কে ওয়ান (K1) প্রকল্পের ক্ষেত্রে আবশ্যিক অন্যান্য যোগ্যতা:-

১. রাজ্যের যেকোন প্রান্তের সরকারি অথবা সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলগুলিতে পাঠরত ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছাত্রীরা কে ওয়ান (K1) প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
২. কেবলমাত্র অবিবাহিত ছাত্রীরাই কে ওয়ান প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
৩.উক্ত ছাত্রীকে সরকারি অথবা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের অষ্টম শ্রেণী থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত হতে হবে।

কে টু (K2) প্রকল্পের ক্ষেত্রে আবশ্যিক অন্যান্য যোগ্যতা:-

১. আবেদনকারী ছাত্রীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে।
২. আবেদনকারী ছাত্রীর বয়স ১৮ বছর থেকে শুরু করে ১৯ বছরের মধ্যে হতে হবে।
৩. আবেদনকারী ছাত্রীকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে স্বীকৃত যেকোন সরকারি অথবা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত হতে হবে।

কে থ্রি (K3) প্রকল্পের ক্ষেত্রে আবশ্যিক অন্যান্য যোগ্যতা:-

১. যে সকল ছাত্রীরা স্নাতক স্তরের শিক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পরেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ইচ্ছুক তারাই কেবলমাত্র K3 প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
২. কে থ্রি (K3) প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্রীকে অবশ্যই স্নাতক স্তরে ৪৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় কত টাকার অনুদান পাওয়া যায়?

১. কে ওয়ান প্রকল্পের আওতাধীন ছাত্রীরা অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সে ছাত্রীরা কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক বছরে ১,০০০ টাকা করে পেয়ে থাকেন।
২. কে টু প্রকল্পের আওতাধীন ছাত্রীরা অর্থাৎ ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছাত্রীরা এককালীন ২৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন।
৩. কে থ্রি (K3) প্রকল্পের ক্ষেত্রে আর্টস এবং কমার্স বিভাগে পাঠরত ছাত্রীদের প্রতিমাসে ২০০০ টাকার অনুদান এবং সায়েন্স বিভাগে পাঠরত ছাত্রীদের প্রত্যেক মাসে ২৫০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।
এই তিনটি ক্ষেত্রেই অনুদানের টাকা সরাসরি ছাত্রীদের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো হয়ে থাকে।

অন্যান্য সাহায্য:-

রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আরও জানিয়ে রাখি যে, শুধুমাত্র আর্থিক অনুদান নয় কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধাভোগী ছাত্রীদের বয়ঃসন্ধিকালে যাতে কোনরূপ শারীরিক অথবা মানসিক সমস্যার শিকার না হতে হয় তার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে এই সকল ছাত্রীদের কিশোরী কিট প্রদান করা হয়ে থাকে। ছাত্রীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য এই কিশোরী কিটে মোট ১৯ টি সামগ্রী দেওয়া হয়ে থাকে। আর এই ১৯ টি সামগ্রী হল:-

১. ৩৯ টি পুষ্টিকর খাবারের পুষ্টিগুণ উল্লিখিত ৩৯ টি কার্ড।
২. কিভাবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পুষ্টিকর খাদ্য রান্না করা সম্ভব তার উপায়।
৩. রক্তাল্পতা হলে কি কি করা উচিত তা সম্পর্কিত তথ্য।
৪. সুস্থ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের টিপস।
৫. পিরিয়ড সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য এবং পিরিয়ড চলাকালীন কিভাবে পরিছন্নতা বজায় রাখা যায় তা সম্পর্কিত নানাবিধ তথ্য।
৬. সেনেটারি ন্যাপকিন সম্পর্কিত তথ্য।
৭. সামাজিক ন্যায় নীতি আদর্শ সংক্রান্ত বই।
৮. শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত বই।
৯. বাস্তবের ছয় কৃতির সাফল্য কাহিনী।
১০. কিশোরী কিটের উপযোগিতা সম্পর্কিত একটি গাইড বুক।
১১. লুডো সহ অন্যান্য ইনডোর গেমস।
১২. সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা সম্পর্কিত একটি বই।
১৩. খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত সাতটি ফ্ল্যাশ কার্ড।
১৪. পেন্সিল বক্স।
১৫. জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য লাভ করেছেন এরূপ মহিলাদের কাহিনী।
১৬. তিনটি লাফ দড়ির সেট।
১৭. রেজিষ্টার।
১৮. জমি সংক্রান্ত আইনি অধিকার সম্পর্কিত হ্যান্ডবুক।
১৯. মাপার ফিতে এবং BMI নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্ড।

কিভাবে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনুদানের জন্য আবেদন জানাতে হয়?

রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, শুধুমাত্র অফলাইনের মাধ্যমে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানো সম্ভব। এর জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার জন্য ইচ্ছুক ছাত্রীকে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের থেকে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর উক্ত ফর্মে আবেদনকারী ছাত্রীর নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, অভিভাবকের নাম, বর্তমানে কোন শ্রেণীতে পাঠরত, ব্লক/পৌরসভা, জেলা, আবেদনকারী ছাত্রীর বৈবাহিক স্থিতি, ছাত্রী প্রতিবন্ধী কিনা, কাস্ট বা জাতি, ধর্ম, আধার কার্ড নম্বর, অভিভাবকের ভোটার কার্ড নম্বর সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যগুলি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।

এরপর উক্ত ছাত্রীর ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত ডিটেলস অর্থাৎ ব্যাংকের নাম, ব্রাঞ্চের নাম, IFS কোড, অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের শাখা, ঠিকানা এবং ছাত্রী অথবা অভিভাবকের মোবাইল নম্বর নির্ভুলভাবে লিখতে হবে। সবশেষে ছাত্রী এবং ছাত্রীর অভিভাবক অথবা পিতা কিংবা মাতাকে ফর্মে স্বাক্ষর করতে হবে, তবেই ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর প্রয়োজনের নথি সহকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় জমা দিলে আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি যে, কে টু অথবা কে থ্রি প্রকল্পে আবেদনের ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিক্যান্ট আইডি বা কন্যাশ্রী আইডি প্রয়োজন হবে।

রিনিউয়েশন:-

ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, একবার ফর্ম পূরণ করলেই প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট সময়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনুদান পাওয়া যাবে এমনটা নয়। প্রতিবছর কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রীদের অবশ্যই রাজ্য সরকারের তরফে নির্ধারিত সময়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের রিনিউয়েশন ফর্ম পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নথি সহকারে ফর্মটি নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হবে। নতুবা কোনভাবেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক বছর অনুদান পাওয়া সম্ভব হবে না।

আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-

১. বয়সের প্রমাণপত্র।
২. অবিবাহিত হওয়ার প্রমাণপত্র।
৩. পরিবারের বাৎসরিক আয়ের সার্টিফিকেট।
৪. ছাত্রীর ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত তথ্য।
৫. কাস্ট সার্টিফিকেট।
৬. প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট।
৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণপত্র।
তবে রিনিউয়েশনের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের আলাদা করে পরিবারের বাৎসরিক আয় সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

Related Articles

Back to top button