মাধ্যমিকে কত শতাংশ নম্বর পেলে গ্রামীণ ডাক সেবক রূপে চাকরি পাওয়া যায়, জেনে নিন।
রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে এক দারুণ সুখবর। ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে জারি করা এক নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে যে, সমগ্র ভারত জুড়ে ইন্ডিয়া পোস্টের অধীনে ১২ হাজারেরও বেশি শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করা হবে। আর এই নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সমগ্র ভারতের চাকরিপ্রার্থীরা রীতিমতো খুশির জোয়ার গা ভাসিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বহু সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে কার্যকর এই শূন্য পদগুলির জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। তবে আবেদন করলেই তো হলো না, আবেদনের ক্ষেত্রে যেমন আবশ্যিক যোগ্যতা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী ঠিক তেমনভাবেই কিভাবে প্রার্থীদের নির্বাচন করা হবে তা সম্পর্কেও জানা অত্যন্ত জরুরী। অর্থাৎ যেকোনো চাকরিতে আবেদনের পূর্বে আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যিক যোগ্যতা এবং কত শতাংশ নম্বর পেলে চাকরিপ্রার্থীদের নির্বাচিত করা হবে তা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা গ্রামীণ ডাক সেবক রূপে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং কত শতাংশ নম্বর পেলে আপনি গ্রামীণ ডাক সেবক রূপে চাকরি পাবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করতে চলেছি।
গ্রামীণ ডাক সেবক রূপে আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যিক যোগ্যতা কি কি:-
সরকারি হোক বা বেসরকারি যেকোনো ক্ষেত্রে চাকরির জন্যই বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়ে থাকে। ঠিক তেমনভাবেই ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফেও সমগ্র ভারতের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কতগুলি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। আর এই শর্তগুলি হল-
১. ভারতীয় ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশিকায় জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের জন্য নির্ধারিত শূন্য পদগুলির আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী প্রার্থীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি যে রাজ্যের আওতাধীন শূন্যপদের জন্য আবেদন জানাতে চাইছেন তাকে সেই রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। এক্ষেত্রে এক রাজ্যের নাগরিক অপর রাজ্যের ডাক বিভাগের শূন্য পদগুলির জন্য কোনভাবেই আবেদন জানাতে পারবেন না।
২. পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে স্বীকৃত যেকোনো বোর্ডের অধীনস্থ বিদ্যালয় থেকে যে সমস্ত চাকরীপ্রার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারাই গ্রামীণ ডাক সেবকের পদের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। অর্থাৎ ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে আবেদনের ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনরূপ নম্বরের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি, শুধুমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করলে সমগ্র ভারতের চাকরিপ্রার্থীরা এই সমস্ত শূন্য পদগুলির জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
৩. এর পাশাপাশি উক্ত চাকরিপ্রার্থীর কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
৪. যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা তাদের রাজ্যের লোকাল ভাষা সম্পর্কে যথেষ্ট ভালোভাবে জানেন এবং সাইকেল চালাতে জানেন তাদের এইসকল শূন্যপদের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে।
৫. ডাক বিভাগের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুসারে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তিরাই গ্রামীণ ডাক সেবক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা বয়সের ক্ষেত্রে ৫ বছরের ছাড় পাবে এবং OBC সম্প্রদায়ভুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা বয়সের ক্ষেত্রে ৩ বছরের ছাড় পাবে। অন্যদিকে জেনারেল ক্যাটাগরির আওতাধীন বিশেষভাবে সক্ষম চাকরিপ্রার্থীরা বয়সের ক্ষেত্রে ১০ বছরের ছাড় পাবেন এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত বিশেষভাবে সক্ষম চাকরিপ্রার্থীদের বয়সের ক্ষেত্রে ১৩ বছরের ছাড় মিলবে। আবার তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত বিশেষভাবে সক্ষম চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বয়সের ক্ষেত্রে ১৫ বছরের ছাড় মিলবে।
আরও পড়ুন:- পড়াশোনায় মনোযোগ বসছে না? জেনে নিন পড়াশোনায় মনোযোগী হবার ৭ টি বিশেষ উপায়।
কত শতাংশ নম্বর পেলে গ্রামীণ ডাক সেবক রূপে চাকরি পাওয়া যাবে?
ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে জারি করার নির্দেশিকায় নির্বাচনের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত যে সমস্ত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে তাতে সমগ্র ভারতে চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, যেসকল চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন জানাবেন তাদের মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হবে। আর এই মেধা তালিকার ভিত্তিতে শূন্যপদ অনুসারে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হবে। যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় যথেষ্ট ভালো নম্বর পেয়েছেন তারা মেধা তালিকার উপরের দিকে থাকবেন আর এই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরাই সর্বপ্রথম চাকরি পাবেন। সমস্ত আবেদনকারীদের পরীক্ষার ফলাফল অনুসারে এই মেধা তালিকা নির্ধারণ করা হবে এবং পরবর্তীতে এই মেধা তালিকা অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীদের ডাক বিভাগের তরফে নিয়োগ করা হবে। অর্থাৎ আপনি চাকরি পাবেন কিনা তা আপনার মাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বরের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে।
এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি রয়েছে তা হল, একাধিক চাকরিপ্রার্থী যদি একই নম্বর পেয়ে থাকেন তবে কি করা হবে। আর এই প্রশ্নের উত্তরে ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে যে, যেসকল চাকরিপ্রার্থীরা একই নম্বর পাবেন তাদের ক্ষেত্রে বয়স অনুসারে চাকরিপ্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অর্থাৎ একই নম্বর পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বেশি তারাই চাকরি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। এছাড়াও চাকরিপ্রার্থীদের ক্যাটাগিরি অনুসারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। একজন চাকরিপ্রার্থী জেনারেল নাকি তপশিলি জাতিভুক্ত নাকি তপশিলি উপজাতিভুক্ত নাকি ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত তার উপর ভিত্তি করে মাধ্যমিকে একই নম্বর পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়ে থাকে। এমনকি বিশেষভাবে সক্ষম এবং ট্রান্স ওমেন চাকরিপ্রার্থীদের সর্বাগ্রে চাকরিক্ষেত্রে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। সুতরাং কত শতাংশ নম্বর পেলে আপনি চাকরি পাবেন তা সরাসরি বলা সম্ভব নয়, এটি সম্পূর্ণভাবে মেধা তালিকার উপর নির্ভর করছে।
ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে তা হল-
ST ট্রান্স-মহিলা, ST মহিলা, SC ট্রান্স-মহিলা, SC মহিলা, OBC ট্রান্স-নারী, OBC মহিলা, EWS ট্রান্স-ওমেন, EWS মহিলা, UR ট্রান্স-নারী, UR মহিলা, ST ট্রান্স -পুরুষ, ST পুরুষ, SC ট্রান্স-পুরুষ, SC পুরুষ, OBC ট্রান্স-পুরুষ, OBC পুরুষ, EWS ট্রান্স-মেল, EWS পুরুষ, UR ট্রান্স-পুরুষ, UR পুরুষ।
হাতে আর মাত্র একদিন:-
ইন্ডিয়া পোস্ট এর তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে ২২শে মে ২০২০ তারিখ থেকে ১১ই জুন ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীরা ডাক বিভাগের ১২,৮৬৮ টি শূন্যপদের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। তবে সমগ্র ভারত ব্যাপী ১২ হাজারেরও বেশি শূন্যপদে আবেদনের সুযোগ থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৪৫ টি শুন্য পদে আবেদনের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়েছে। আজ ১০ই জুন। আপনি যদি ভারতীয় ডাক বিভাগের এই সমস্ত শূন্য পদগুলির অধীনে আবেদন জানাতে চান তবে আপনার হাতে আর মাত্র একটি দিন সময় রয়েছে। এর মধ্যে আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করলে উপরোক্ত শূন্য পদগুলির জন্য কোনভাবেই আবেদন জানানো সম্ভব হবে না।