পশ্চিমবঙ্গে ২৫% মহার্ঘ ভাতা প্রদান নিয়ে আবারো আদালতে রাজ্য! তাহলে কি আটকে গেল সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ?

WB Government Employees DA

রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বা বকেয়া ডিএ নিয়ে আবারো নতুন খবর! বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) মেটানো নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশের পরিবর্তন আবারো সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ রাজ্য সরকার। ভারতীয় শীর্ষ আদালতের নির্দেশের উপর বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে আর্জি জানিয়েছে রাজ্য সরকার। অপরদিকে সুপ্রিম কোর্টের গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলার কারণে শুনানি বন্ধ রয়েছে। তাহলে কি সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা পাবেন না রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা? জানতে হলে পড়তে হবে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি।

বকেয়া ডিএ মেটানো নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ রাজ্য

সুপ্রিম কোর্টের তরফে অন্তর্বর্তীকালীন যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার পরিবর্তন বা মডিফিকেশন চেয়ে আইনিভাবে আপিল করছে রাজ্য সরকার। ভারতীয় আইন বিধানে এই সুযোগ রয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। ইতিমধ্যেই এই আবেদন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এর পরবর্তী নির্দেশের জন্য সরকার থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা সকলেই অপেক্ষা করে রয়েছেন, কিন্তু বর্তমানে গরমের ছুটি চলছে আদালতে। সেই কারণে এই মামলার শুনানি সম্ভব হচ্ছে না।

সুপ্রিম কোর্ট কী নির্দেশ দিয়েছিল?

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ মেটানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তরফে রাজ্য সরকারকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ২৫ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশ মেনে আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ব্যাংক একাউন্টে পর্যাপ্ত ডিএ (DA Hike) পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে হবে রাজ্য সরকারকে। তবে এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের ঘোষণার ইনটেরিম অর্ডার’ খতিয়ে দেখে বেশ কয়েকটি ধারার বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে চাইছে রাজ্য। এক্ষেত্রে DA দেওয়ার সময়ও সুবিধা হবে বলে জানানো হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ এর সাথে নতুন পে কমিশন!

বকেয়া ডিএ নিয়ে কী সমস্যা দেখা দিল?

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বকেয়া ডিএ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে রাজ্য সরকার। বকেয়া ডিএ এর ২৫ শতাংশ নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে বলে জানাচ্ছে নবান্ন। এই কারণেই মূলত আবার করে মডিফিকেশন বা পরিবর্তনের আবেদন জানানো হয়েছে শীর্ষ আদালতের কাছে। বিভিন্ন আইনে বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে, এই ধরনের প্রসঙ্গে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন মনে করলে সুপ্রিম কোর্টের সম্পূর্ণ নির্দেশ আমূল বদলে যেতে পারে। পাশাপাশি এই নির্দেশে পরিবর্তনও আনা যেতে পারে। রাজ্য সরকারের আইনি অধিকার রয়েছে কোনরকম রিভিউ পিটিশন ছাড়াই মোডিফিকেশন বা পরিবর্তনের জন্য আবেদন জানানোর। একাধিক আইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই রাজ্য সরকার আবারও দ্বারস্থ হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের কাছে।

তাহলে কি আটকে গেল সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা?

রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, বকেয়া ডিএ সংক্রান্ত মূল মামলা যেমন চলছে তেমনি চলবে। অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশও আবার পর্যালোচনার জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে না। আসলে এক্ষেত্রে, কোনরকম রিভিউ পিটিশন ছাড়াই আদালতের নির্দেশ মডিফিকেশন বা পরিবর্তনের আর্জি জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে জানানো হচ্ছে, ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে নবান্ন।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ এর প্রথম কিস্তির ২৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা কবে পাবেন? 

আসলে এখনো পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের কার্যকলাপ বন্ধ থাকার কারণে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাজ্য সরকারের আবেদন কত দিনে অ্যাপ্রুভ হবে এবং সুপ্রিম কোর্টে তার শুনানির জন্য যাবে, এর কোন ঠিক নেই। এই কারণেই রাজ্য সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সমস্ত বকেয়া ডিএ পাঠিয়ে দেওয়া হবে রাজ্যের কর্মচারীদের ব্যাংকে।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি কর্মী রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রায় চার লক্ষের কাছাকাছি স্কুল শিক্ষক ছাড়াও পঞ্চায়েত, পুরসভা, পুরনিগম, সরকার পোষিত স্বশাসিত সংস্থার প্রায় এক লক্ষ কর্মী মিলিয়ে প্রায় ৮ লক্ষের বেশি মানুষকে মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। আবার বর্তমান কর্মচারীদের পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ধরলে সেই সংখ্যা দিয়ে দাঁড়াবে ১০ লক্ষে।

‘রোপা রুল’ মেনেই দেওয়া হবে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা

সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবলম্বন করা হবে ‘রোপা রুল’। ২০০৮-এর ১ এপ্রিল থেকে ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত লাগু হয় এই রোপা রুল ২০০৯। এই নিয়ম অনুসারে, ২০০৮-এর ১ আগস্ট থেকে ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যাঁরা বেতন পেয়েছেন বা এখনও কাজ করছেন, তাদের জন্যই বকেয়া ডিএ এর ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ ২০০৮ সালের ৯ মাস এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ১৪১ মাসের বকেয়া দেওয়া হবে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের। তবে ২০১৯ সালের পরে সমস্ত কর্মচারীরা সরকারি দপ্তরে নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁরা যেহেতু রোপা ২০০৯-এর আওতায় চাকরি পাননি, তাদের কোনরকম অতিরিক্ত মহার্ঘভাতা দেওয়া হবে না।

Related Articles

Back to top button