SSC Scam – পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে টাকা ফেরতের আশ্বাস। অযোগ্য শিক্ষকেরা টাকা ফেরত পাবেন

West Bengal SSC Scam

পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে (West Bengal SSC Scam) যারা এজেন্টের মাধ্যমে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, চাপে পড়ে কার্যত টাকা ফেরতের আশ্বাস মিললো একাধিক এজেন্টের থেকে। যারা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে তাদের চাকরি বাতিল হয়েছে, এর পরই টাকা ফেরতের দাবি ওঠে আর এর পরই টাকা ফেরতের আশ্বাস মিলেছে, এজেন্টদের একাংশের কাছ থেকে। বিস্তারিত জেনে নিন।

পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে নয়া মোড়

পশ্চিমবঙ্গের মোহনপুরের কালীপদ পতি, যিনি কালী পতি নামেই এলাকায় পরিচিত, তাঁর নাম এখন চাকরি দুর্নীতির আলোচনায় বারবার উঠে আসছে। টাকার বিনিময়ে শিক্ষক, সেনাবাহিনী কিংবা রেলের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের। বাম আমল থেকে শুরু করে তৃণমূল জমানায় তাঁর প্রভাব বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এখন চাকরি হারানো মানুষ তাঁর কাছে টাকা ফেরত চাইতে আসছেন, আর তিনি দিচ্ছেন ফেরতের আশ্বাস। কিন্তু এই আশ্বাস কতটা সত্যি? চলুন জেনে নিই।

কীভাবে উঠল কালীপদের নাম?

কালীপদ পতির নাম প্রথম আলোচনায় আসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে। তিনি একাধিকবার দাবি করেছেন, কালীপদই চাকরি দুর্নীতির অন্যতম মাথা। স্থানীয় সূত্র বলছে, মোহনপুরে তাঁর প্রভাব এতটাই যে ‘চাকরি পেতে হলে কালীর কাছে যাও’—এমন কথা প্রচলিত। শুধু মোহনপুর নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলাতেও তাঁর নামডাক ছড়িয়েছে। অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে তিনি অনেককেই চাকরি জুটিয়ে দিয়েছেন।

কীভাবে কাজ করতেন কালীপদ?

সূত্রের দাবি, কালীপদ একা কাজ করতেন না। তাঁর সঙ্গে ছিল প্রায় ৩৫ জনের একটি দল। এই দল চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করত। চাকরির ধরনের ওপর নির্ভর করে টাকার পরিমাণও বদলাত:

  • শিক্ষকের চাকরির জন্য ১০-১৫ লাখ টাকা।
  • সেনাবাহিনী বা রেলের চাকরির জন্য ৫-১০ লাখ টাকা।
  • কিছু ক্ষেত্রে চাকরি না হলে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হত।
    কিন্তু অনেকেই চাকরি পেলেও, সাম্প্রতিক দুর্নীতি তদন্তে অনেকের চাকরি গেছে। এখন তারাই কালীপদের দ্বারস্থ।

সিবিআই-ইডি তদন্তে কালীপদের গা-ঢাকা

২০২২ সালে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই ও ইডি তদন্ত শুরু করলে কালীপদ বেশ কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি শুধু মধ্যস্থতাই করেননি, বরং দুর্নীতির নেটওয়ার্কের একটি বড় অংশ ছিলেন। তবে তিনি এখনও গ্রেপ্তার হননি। এলাকায় ফিরে এসে তিনি টাকা ফেরতের আশ্বাস দিচ্ছেন বলে খবর। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এটা শুধুই সময় কেনার কৌশল।

আরও পড়ুন, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি একেবারে বন্ধ হচ্ছে! গ্যাসের দাম আরও বাড়বে!!

এলাকার মানুষের কী প্রতিক্রিয়া?

মোহনপুরের মানুষের মধ্যে কালীপদকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলছেন, তিনি অনেক গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের চাকরি দিয়ে সাহায্য করেছেন। আবার অনেকে তাঁকে ‘চাকরি ব্যবসায়ী’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। যাঁরা টাকা দিয়ে চাকরি পাননি বা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রাগ বেশি। তাঁরা বলছেন, কালীপদের প্রতিশ্রুতি এখন শুধুই কথার কথা।

আরও পড়ুন, এপ্রিল মাসে কৃষক বন্ধু প্রকল্প, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতার টাকা কবে পাবেন জেনে নিন।

কী হবে এখন?

কালীপদের বিরুদ্ধে তদন্ত কোন পর্যায়ে, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে সিবিআই ও ইডি এখনও শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কালীপদের টাকা ফেরতের আশ্বাস কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অনেকে মনে করছেন, আইনি পদক্ষেপ না হলে এই দুর্নীতির জাল ভাঙা কঠিন।

শেষ কথা

কালীপদ পতির গল্প পশ্চিমবঙ্গের চাকরি দুর্নীতির একটি অংশ মাত্র। তাঁর মতো আরও কতজন এই জালের সঙ্গে জড়িত, তা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ধোঁকা দেওয়ার এই প্রবণতা বন্ধ না হলে, সাধারণ মানুষের ভরসা আরও কমবে। কালীপদের আশ্বাস কি সত্যি হবে, নাকি এটাও আরেকটি প্রতারণা? সময়ই বলবে।

Related Articles

Back to top button